মাটি ছাড়াই চারা উৎপাদন: ভিন্নধর্মী সবজি নার্সারিতে ভাই-বোনের বাজিমাত

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:

প্রচলিত কৃষি পদ্ধতির বাইরে গিয়ে নতুন প্রযুক্তিতে সফলতা খুঁজে পেয়েছেন চুয়াডাঙ্গার দুই ভাই-বোন। মাটি ছাড়াই প্লাস্টিকের ট্রে আর ছোট গ্লাসে নারিকেলের ছোবড়া (কোকোপিট) ব্যবহার করে উৎপাদন করছেন হাজার হাজার সবজির চারা। তাদের এই আধুনিক ও ভিন্নধর্মী নার্সারিটি এখন স্থানীয় কৃষকদের কাছে এক নতুন সম্ভাবনার নাম।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা শহর থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে বাস টার্মিনাল সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে এই নার্সারি। নাম দিয়েছেন ‘ফারমার্স হাব গ্রিন হাউস’। ২০ শতক বর্গা জমিতে গড়ে ওঠা এই নার্সারিতে এখন সবুজের সমারোহ।

উদ্যোক্তা ভাই-বোনের গল্প

এই অভিনব উদ্যোগের নেপথ্যে রয়েছেন ভাই ইমরান হোসেন ও বোন ডা. সুজন তারা। তারা আলমডাঙ্গা উপজেলার ডাউকি ইউনিয়নের বকসিপুর গ্রামের বাসিন্দা। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সহায়তায় তারা এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন। লক্ষ্য ছিল আধুনিক পদ্ধতিতে সুস্থ ও রোগমুক্ত চারা উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হওয়া।

কলেজপড়ুয়া ইমরান হোসেন জানান, ইউটিউব দেখে তিনি মাটি ছাড়া চারা উৎপাদনের এই পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হন। এরপর বোন সুজন তারার সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি বাস্তবায়নে নামেন। প্রথমে কিছু কৃষি প্রশিক্ষণ নেন এবং জানতে পারেন যে, একই জমিতে বারবার চারা উৎপাদন করলে মাটিতে রোগজীবাণু ছড়ায়। কিন্তু ট্রে পদ্ধতিতে মাটি ছাড়া কোকোপিট ব্যবহার করলে সেই ঝুঁকি থাকে না।

যেভাবে হচ্ছে চারা উৎপাদন

শুক্রবার সকালে সরেজমিনে নার্সারিতে দেখা যায়, পলি হাউসের নিচে প্লাস্টিকের ট্রেতে বীজ বপনের কাজ চলছে। মাটির বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে জীবাণুমুক্ত কোকোপিট। ওপরে টাঙানো হয়েছে শেডনেট, যাতে তাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ও উদ্যোক্তা সুজন তারা জানান, নারিকেলের ছোবড়া, গোবর, কচুরিপানা ও অল্প পরিমাণ রাসায়নিক সার মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পচিয়ে বিশেষ কোকোপিট মিশ্রণ তৈরি করা হয়। এরপর ট্রে বা গ্লাসে সেই মিশ্রণ দিয়ে বীজ বপন করা হয়। মাত্র তিন দিনের মধ্যে বীজ থেকে অঙ্কুর গজায় এবং ১৫ দিনের মধ্যেই চারা বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে।

লাভজনক ব্যবসায়িক মডেল

প্রায় ১০ শতক জায়গাজুড়ে ৪০টি বেডে সাজানো রয়েছে বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ, টমেটো ও মিষ্টি কুমড়োর চারা। বর্তমানে নার্সারিতে প্রায় এক লাখ চারা মজুদ রয়েছে। প্রতিটি চারা জাতভেদে দেড় টাকা থেকে তিন টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ইমরান হোসেন জানান, নার্সারি স্থাপনে শুরুতে তাদের খরচ হয়েছিল প্রায় ৫০ হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার চারা বিক্রি হচ্ছে। খরচ বাদে মাসে তাদের লাভ থাকছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া নার্সারি থেকে ২০ টাকা কেজি দরে ভার্মি কম্পোস্ট সার ও কোকোপিটও বিক্রি করছেন তারা।

কর্মকর্তাদের ভাষ্য

মাটি ছাড়া চারা উৎপাদনের এই পদ্ধতিকে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখছে কৃষি বিভাগ। আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ পলাশ বলেন, “এখন পরীক্ষামূলক পর্যায়ে হলেও এই পদ্ধতি কৃষির জন্য আশীর্বাদ। কোকোপিটের মিশ্রণে ট্রে পদ্ধতিতে উৎপাদিত চারা মাটিবাহিত রোগবালাই থেকে মুক্ত থাকে। ফলে কৃষকরা সুস্থ ও সবল চারা পান। আমরা অন্য কৃষকদেরও এই আধুনিক পদ্ধতিতে উদ্বুদ্ধ করছি।”


Discover more from কৃষি প্রতিদিন

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

মতামত দিন