‘আম্রপালির কন্যা’—অম্বিকা এখন বাংলাদেশের মাটিতে, নজরকাড়া রঙ ও স্বাদের জন্য গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে
নিউজ প্রতিবেদন
ভারতের জনপ্রিয় দুই আম জাত ‘আম্রপালি’ ও ‘জনার্দন পছন্দ’-এর সংকরজাত নতুন আম ‘অম্বিকা’র দেখা মিলেছে যশোর হর্টিকালচার সেন্টারে। এটি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ফলন দিয়েছে। এর আকর্ষণীয় রং, ঘ্রাণ এবং স্বাদ ইতিমধ্যে গবেষকদের দৃষ্টি কাড়ছে।
এক বছর বয়সী একটি চারাগাছে ঝুলছে একটিমাত্র অম্বিকা আম, যার ওজন ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ গ্রাম। দেশের মাটিতে প্রথম এই ফলনকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা, সার্বক্ষণিক সিসিটিভি নজরদারি চলছে।
অম্বিকার পরিচয়: মায়ের স্বাদ, বাবার রং
ভারতের কৃষি গবেষণা সংস্থা ২০০০ সালে উদ্ভাবন করে এই বিশেষ জাতের আম। এটি ‘আম্রপালি’ জাত থেকে স্বাদ ও ঘ্রাণ পেয়েছে, আর চেহারায় ‘জনার্দন পছন্দ’-এর লালচে রঙের ছাপ রয়েছে। তাই গবেষকরা একে বলেন, “আম্রপালির কন্যা, জনার্দন পছন্দের উত্তরাধিকারী।”
যশোর হর্টিকালচার সেন্টারে অম্বিকা ও জাপানের বিশ্বখ্যাত ‘সূর্যডিম’ আমের গাছ পাশাপাশি লাগানো হয়েছে। দুই জাতেরই রং নজরকাড়া লালচে, যদিও সূর্যডিম তুলনায় উজ্জ্বল।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য
- সংকরজাত: আম্রপালি × জনার্দন পছন্দ
- চেহারা: কাঁচা অবস্থায় লালচে, পাকা অবস্থায় উজ্জ্বল হলুদে লাল আভা
- স্বাদ: আম্রপালির মতো মিষ্টি, আঁশহীন
- প্রথম ফলন: যশোর হর্টিকালচার সেন্টার, ২০২৫
- সুরক্ষা: ফলন পর্যবেক্ষণে সিসিটিভি ক্যামেরা
বাংলাদেশে গবেষণার নতুন দুয়ার
যশোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক দীপংকর দাশ জানান, “আম্রপালি জাতটি এখন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। ফলন কমছে, আকার ছোট হচ্ছে, রোগবালাই বাড়ছে। তাই আম্রপালির গুণাবলি রেখে টেকসই জাত হিসেবে ভারত অম্বিকা উদ্ভাবন করে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভারত থেকে এই জাতের চারা সংগ্রহ করেছি।”
২০২৩ সালের জুনে ৬টি চারা আনা হয় ভারত থেকে। যশোরে ৩টি, বাকি ৩টি দিনাজপুর ও ঢাকার আসাদগেট হর্টিকালচার সেন্টারে পাঠানো হয়। বর্তমানে যশোরে প্রায় ১০০টি অম্বিকা চারা তৈরি হয়েছে।
কে জে এম আবদুল আওয়ালের ভূমিকা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক কে জে এম আবদুল আওয়াল ভারতের অম্বিকা আম প্রথম চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন,
“ভারতে চিকিৎসার জন্য গিয়ে অম্বিকা আম খেয়েছিলাম। স্বাদ আম্রপালির মতোই, কিন্তু রঙে ভিন্নতা রয়েছে। সেখান থেকেই উদ্যোগ নিই বাংলাদেশে এটি আনার।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, অম্বিকার ফলন, মান ও পরিবেশ উপযোগিতা নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। দেশের ৮৩টি হর্টিকালচার সেন্টারে এই জাত ছড়িয়ে দিয়ে পর্যবেক্ষণ চালানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।