গাছের সান্নিধ্যে মানসিক প্রশান্তি: গবেষণায় প্রমাণ, ঘরে গাছ থাকলে মানসিক চাপ ২০% কমে।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
গবেষণায় প্রমাণিত—ঘরে গাছ থাকলে মানসিক চাপ ২০% কমে। ইনডোর প্ল্যান্ট শুধু সৌন্দর্যই আনে না, বাতাস পরিশুদ্ধ করে, মানসিক প্রশান্তি ও পারিবারিক বন্ধনও বাড়ায়।
গাছ মানেই প্রশান্তি
গাছ শুধু পরিবেশকে সুন্দর করে না, মানুষের মনকেও শান্ত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের বাসায় গাছ আছে তারা মানসিকভাবে অন্তত ২০% বেশি শান্ত থাকেন। সবুজ রঙের উপস্থিতি মানুষের মানসিক চাপ কমাতে এবং প্রশান্তি ফিরিয়ে আনতে সহায়ক।
শহুরে জীবনে সবুজের স্পর্শ
কাজের চাপ, যানজট, শব্দদূষণ আর প্রযুক্তির আসক্তির মধ্যে আমরা সবাই মানসিকভাবে চাপে থাকি। ঘরের এক কোণে কিছু টবের গাছ থাকলে সেই জায়গায় এক ধরনের স্বস্তি তৈরি হয়। সকালে ফুল ফোটা বা নতুন পাতা গজানো দেখলে মনের ভেতর ইতিবাচক অনুভূতি জাগে, যা পুরো দিনের জন্য শক্তি যোগায়।
বাতাস পরিশুদ্ধ করে ইনডোর প্ল্যান্ট
গাছ শুধু সৌন্দর্য বাড়ায় না, বরং ঘরের বাতাসও পরিশুদ্ধ করে। স্নেক প্ল্যান্ট, মানি প্ল্যান্ট, স্পাইডার প্ল্যান্টের মতো ইনডোর গাছ বাতাসে অক্সিজেন বাড়ায় এবং ক্ষতিকর গ্যাস শোষণ করে। ফলে শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ হয়, মাথাব্যথা ও ক্লান্তি কমে, শরীর-মন দুটোই ভালো থাকে।
গাছের যত্ন নেওয়া মানেই থেরাপি
গাছে পানি দেওয়া, মাটি পাল্টানো কিংবা পাতায় হাত বুলিয়ে দেওয়া—এসব কাজ অনেকটা মেডিটেশনের মতো। এতে মন শান্ত থাকে, মনোযোগ বাড়ে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, যারা বিষণ্নতায় ভোগেন তাদের নিয়মিত গাছের যত্ন নিতে বলা হয়, কারণ এটি মানসিকভাবে সংযোগ তৈরি করে এবং ইতিবাচক শক্তি জাগায়।
গাছের সঙ্গে আবেগী সম্পর্ক
টিভি বা ফ্রিজ যেমন নিস্তব্ধ বস্তু, গাছ কিন্তু জীবন্ত সত্তা। গাছ বড় হয়, বদলায়, প্রতিক্রিয়া দেয়। অনেকেই তাদের গাছের সঙ্গে কথা বলেন, নাম দেন, যত্ন নেন যেন কষ্ট না পায়। এই সংবেদনশীলতা মানুষের ভেতরে সহানুভূতি ও ভালোবাসা বাড়ায়।
পারিবারিক বন্ধনেও ভূমিকা রাখে গাছ
গাছের যত্ন নেওয়া শুধু ব্যক্তিগত শান্তিই আনে না, পরিবারের বন্ধনও মজবুত করে। ছাদের বাগানে একসাথে গাছ লাগানো, পানি দেওয়া বা সার দেওয়া—এসব কাজ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সময় কাটানো ও সম্পর্ক উন্নত করার দারুণ মাধ্যম।
ছোট জায়গাতেও সম্ভব সবুজের ছোঁয়া
আজকাল অনেকেই ছোট ফ্ল্যাটে থাকেন, তবুও জানালার পাশে, বারান্দায় বা রান্নাঘরের কোণায় কয়েকটি টব রাখা সম্ভব। জায়গা খুব কম হলেও এর মানসিক সুফল অনেক বড়।
ঘর সাজাতে খুব অল্প জায়গায় রাখা যায় যে ১০টি ইনডোর গাছ
সবুজের ছোঁয়ায় বাড়ুক সৌন্দর্য ও প্রশান্তি
শহুরে জীবনের ব্যস্ততা আর জায়গার সংকটে গাছের সান্নিধ্য পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু চাইলে খুব অল্প জায়গাতেই রাখা যায় কিছু ইনডোর গাছ, যা ঘরের সৌন্দর্য বাড়াবে, অক্সিজেন বৃদ্ধি করবে এবং মানসিক প্রশান্তি দেবে।
এখানে এমন ১০টি গাছের তালিকা দেওয়া হলো, যেগুলো সহজ যত্নে ঘরের কোণা, বারান্দা, এমনকি অফিসের ডেস্কেও রাখা যায়।
স্নেক প্ল্যান্ট: ‘স্নেক’ নাম হলেও এর সঙ্গে সাপের কোনো সম্পর্ক নেই। স্নেক প্ল্যান্ট যে কোনো নতুন গাছপ্রেমীর প্রথম পছন্দ হতে পারে। পানি কম দিলেও গাছ বেঁচে থাকে, তবে অতিরিক্ত পানি দিলে মরে যেতে পারে। মাটি শুকিয়ে গেলে তবেই পানি দিতে হবে।
অ্যালোভেরা: ত্বকের সমস্যা যেমন সানবার্ন বা হাত পুড়ে গেলে অ্যালোভেরা প্রাকৃতিক ওষুধের মতো কাজ করে। কম যত্নেই এই গাছ টিকে যায়। শুধু মাটি শুকিয়ে গেলে পানি দিলেই যথেষ্ট।
স্পাইডার প্ল্যান্ট: ঝুলন্ত পাতার জন্য স্পাইডার গাছ ঘরের জানালা বা কোণ সাজানোর জন্য দারুণ। এর ছোট ছোট বেবি গাছ ঝুলে পড়ে, যা দেখতে খুব সুন্দর লাগে। ঘুমের সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্যও এই গাছ উপকারী।
পোথোস (মানি প্ল্যান্ট): বাংলাদেশে জনপ্রিয় মানি প্ল্যান্ট বা পোথোস পানি ও মাটিতে সহজেই বেঁচে থাকতে পারে। পাতার ডাল থেকে নতুন গাছ তৈরি করা যায়। বিশেষত গোল্ডেন পোথোস সবচেয়ে সহজলভ্য এবং নতুন বাগানিদের জন্য আদর্শ।
কয়েন প্ল্যান্ট: বাংলাদেশি পরিবারে পরিচিত এই গাছ উজ্জ্বল আলোতে ভালো জন্মায়। প্রতিদিন পানি দিতে হয়। দক্ষিণমুখী জানালা বা বারান্দার জন্য এটি আদর্শ গাছ।
পিস লিলি: ইনডোর ফুলগাছের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পিস লিলি। সাদা ফুল ঘরের সৌন্দর্য বাড়ায়, পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তিও আনে। কিছুটা আলো এলে ফুল আরও ভালো হয়।
অ্যাংলোনিমা: শুধু সবুজ নয়, লাল ও গোলাপি রঙের পাতার জন্য অ্যাংলোনিমা বেশ আকর্ষণীয়। গোড়া থেকে শাখা বের হয়ে ঝোপালো আকার নেয়, যা ছোট্ট ইনডোর বাগানকে বৈচিত্র্যময় করে তোলে।
লাকি ব্যাম্বু: পানি বা মাটিতে বেড়ে ওঠা সহজ এই গাছকে অনেকে ‘ভাগ্যের প্রতীক’ হিসেবেও মনে করেন। যত্ন নেওয়া সহজ, তাই ব্যস্ত মানুষদের জন্য আদর্শ ইনডোর প্ল্যান্ট।
ফিলোডেনড্রন: ফিলোডেনড্রনের অনেক রকম ভ্যারিয়েশন আছে—হার্ট শেপ ফিলো বা ব্রাজিলিয়ান ফিলো বিশেষ জনপ্রিয়। পাতার নানা শেড ঘরে সজীবতা আনে। পোথোসের মতোই সহজ যত্নে রাখা যায়।
জেড প্ল্যান্ট: ক্যাকটাসজাতীয় হলেও এতে কাঁটা নেই। বনসাইয়ের বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় এই গাছ কম পানি পেলেও দীর্ঘদিন টিকে থাকে। বনসাইপ্রেমীদের জন্য জেড হতে পারে সেরা পছন্দ।
সবুজের ছোঁয়ায় ঘরে আনুন শান্তি
যত্ন নেওয়া কঠিন ভেবে অনেকেই ইনডোর প্ল্যান্ট থেকে দূরে থাকেন। অথচ এই গাছগুলো সামান্য জায়গাতেই ঘরকে করে তোলে প্রাণবন্ত। সবুজ শুধু সৌন্দর্য নয়, মনের প্রশান্তি ও পরিবারের জন্য ইতিবাচক শক্তিও বয়ে আনে।
Discover more from কৃষি প্রতিদিন
Subscribe to get the latest posts sent to your email.