বিশেষ প্রতিনিধি, শরীয়তপুর:
সবেমাত্র আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে। সেই জমিতেই এখন চলছে রসুন রোপণের তোড়জোড়। তবে প্রথাগত পদ্ধতির বদলে শরীয়তপুরের কৃষকরা ঝুঁকছেন ‘বিনা চাষ’ পদ্ধতিতে রসুন আবাদের দিকে। কম খরচ, আগাম ফসল ঘরে তোলা ও ভালো দাম পাওয়ায় এই পদ্ধতি জেলায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
তবে সার ও কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের অঙ্ক নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় আছেন কৃষকরা।
লক্ষ্যমাত্রা ও আবাদের ব্যাপ্তি
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, পদ্মা নদীর তীরবর্তী শরীয়তপুরের মাটি বেলে দোআঁশ হওয়ায় রসুনের উৎপাদন ভালো হয়। চলতি মৌসুমে জেলায় রসুন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে, আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪২ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন। জেলার জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলায় এই পদ্ধতিতে রসুনের আবাদ সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে।
যেভাবে হয় বিনা চাষে আবাদ
কৃষকরা জানান, বর্ষার পানি জমি থেকে নেমে যাওয়ার পর আমন ধান কাটা হয়। সেই ভেজা জমিতেই ধানের খড় সরিয়ে রসুনের কোয়া সারিবদ্ধভাবে গেঁথে দেওয়া হয়। অক্টোবর মাসের শেষের দিক থেকে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এই রসুন আবাদ করা হয়।
রোপণের পর রসুনের সুরক্ষার জন্য জমিতে পড়ে থাকা খড় বা কচুরিপানা দিয়ে ফসল ঢেকে দেওয়া হয়, যাকে মালচিং পদ্ধতি বলা হয়। এই পদ্ধতি মাটির উর্বরতা ধরে রাখে এবং ফসলে কীটপতঙ্গের আক্রমণ কমায়।
কৃষকরা যা বলছেন
নড়িয়া উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের কৃষক নিরঞ্জন মাল জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ৪০ শতাংশ জমিতে বিনা চাষ পদ্ধতিতে রসুন আবাদ করেছেন।
তিনি বলেন, “বিনা চাষ পদ্ধতিতে রসুন আবাদ আমাদের জন্য বেশি সুবিধাজনক। আগে চাষ পদ্ধতিতে জমি হাল দিয়ে উপযোগী করতে হতো, কোটা (কৃষিযন্ত্র) দিয়ে মাটি মসৃণ করতে হতো। এতে খরচ দ্বিগুণ হতো। বিনা চাষে খরচ কম, ফলন বেশি, তাই আমরা লাভবান হচ্ছি।”
জাজিরার জামতলা এলাকার কৃষক মোশাররফ হোসেন বলেন, “এই পদ্ধতিতে ফসল দ্রুত ঘরে তোলা যায়, আর দামও বেশ ভালো পাওয়া যায়। তবে এখন প্রধান সমস্যা হচ্ছে সার ও কীটনাশকের দাম। দিন দিন দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সরকারের কাছে আবেদন, যাতে আমাদের বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়।”
আরেক কৃষক জামাল দেওয়ান বলেন, “এই পদ্ধতি ভালো, তবে বৃষ্টি হলে নিচু জমিতে ফসল নষ্টের আশঙ্কা থাকে। অবশ্য ধানের খড় দিয়ে ঢেকে রাখায় ক্ষতির সম্ভাবনা কমে যায়।”
কর্মকর্তার বক্তব্য
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোস্তফা কামাল হোসেন বলেন, “বিনা চাষ পদ্ধতিতে রসুন আবাদ কৃষকদের জন্য খুব লাভজনক। এই পদ্ধতিতে একদিকে খরচ কম, অন্যদিকে মৌসুমের শুরুতে ফসল ওঠায় বাজারে বেশ ভালো দাম পাওয়া যায়। আমরা সব সময় কৃষক ভাইদের বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা করে যাচ্ছি।”
Discover more from কৃষি প্রতিদিন
Subscribe to get the latest posts sent to your email.