কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, পাহাড়ি এই ধনেপাতার বাজার এখন ২০০ কোটি টাকার বেশি।
- পাহাড়ি বিলেতি ধনেপাতা এখন লাভজনক অর্থকরী ফসল।
- একই জমিতে সাথী ফসল চাষে বাড়তি আয়।
- পাহাড়ি এলাকায় আলো-ছায়া ও পানি নিষ্কাশন উপযোগী পরিবেশ।
- সারা দেশে চাহিদা বাড়ায় বাজারমূল্য ২০০ কোটি ছাড়িয়েছে।
- কৃষি বিভাগ উৎপাদন বাড়াতে কাজ করছে মাঠ পর্যায়ে।
নিজস্ব প্রতিবেদক | রাঙামাটি
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি পাদদেশে বাঁশের মাচায় গড়ে উঠেছে দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল বিলেতি ধনেপাতা। সুগন্ধি, পুষ্টিগুণ ও ভেষজ উপাদানে সমৃদ্ধ এই ধনেপাতা এখন সারা দেশে ব্যাপক চাহিদা তৈরি করেছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, পাহাড়ি এই ধনেপাতার বাজার এখন ২০০ কোটি টাকার বেশি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলায় কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতিতে চমক দেখাচ্ছে বিলেতি ধনিয়া পাতা। উপযুক্ত ভূমি ও অনুকূল পরিবেশের কারণে লাভজনক ফসল হওয়ায় বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
কীভাবে চাষ হচ্ছে বিলেতি ধনেপাতা?
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জেলার কাউখালী, কাপ্তাই ও বিলাইছড়ি উপজেলার গ্রামে গ্রামে মাচার নিচে ঝুলছে সবুজ ধনেপাতা। অনেকে ধনে পাতা বাছাই করে আঁটি বেঁধে বাজারে পাঠাচ্ছেন। এরপর ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে তা পৌঁছাচ্ছে দেশের বিভিন্ন শহরে।
পাহাড়ি ভূমির আদর্শ পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, আলো-ছায়ার ভারসাম্য এবং জমির রস ধরে রাখার গুণাগুণের কারণে এই ফসলটি এখানে অত্যন্ত সফলভাবে চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে মাচা ব্যবহার করে ধনেপাতার পাশাপাশি লাউ, বরবটি ও চিচিঙ্গার মতো সাথী ফসলও ফলানো যাচ্ছে।
কৃষকের মুখে সাফল্যের গল্প
অমিও চাকমা, যিনি এক একর জমিতে বিলেতি ধনেপাতা চাষ করছেন, বলেন— “বাজারে এখন প্রতি কেজি ধনেপাতা ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার ধনেপাতা বিক্রি করতে পারব।”
তিনি আরও জানান, একবার রোপণ করলেই একটি মৌসুমে চারবার পর্যন্ত ধনেপাতা সংগ্রহ করা যায়।
সজনি চাকমা বলেন— “ধনেপাতা চাষে মাচা দিতে হয়। সেই মাচায় আমরা লাউ, বরবটি চাষ করি। এতে বাড়তি আয় হয়। একই জমিতে দুই রকম ফসল।”
কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও পরিকল্পনা
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন— “এই ধনেপাতার বাজারমূল্য এখন ২০০ কোটি টাকার বেশি। তাই আমরা কৃষকদের আরও উৎসাহ দিচ্ছি উৎপাদন বাড়াতে।”
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে:
- চাষ হয়েছে: ৫০ হেক্টর জমিতে
- উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা: ৩,০০০ মেট্রিক টন
- ফসলের ধরন: সুগন্ধি, পাতাজাত, ভেষজ উপকারী সবজি
- বাজারমূল্য: প্রায় ২০০+ কোটি টাকা
কৃষি বিভাগ আরও বলছে, পাতা জাতীয় ফসলটি সুগন্ধযুক্ত, উচ্চ পুষ্টি ও ভেষজগুণ সমৃদ্ধ এই সবজিটির এখন সারা দেশে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। তবে এই ফসল জলাবদ্ধতা সইতে পারে না। এগুলো চাষের জন্য জমিতে যেমন রস থাকতে হয়, তেমনি পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে হয়।
এসব বিবেচনায় পার্বত্য অঞ্চল এই ধনেপাতা চাষের আদর্শ স্থান হয়ে উঠেছে। আর চাহিদা থাকায় বিলেতি ধনেপাতা এখন পার্বত্য অঞ্চলের অন্যতম অর্থকরী ফসল হিসাবে স্থান করে নিয়েছে।
Discover more from কৃষি প্রতিদিন
Subscribe to get the latest posts sent to your email.