নড়াইলে টমেটোর ভালো ফলনেও বিপাকে পড়েছেন কৃষক। মাঠজুড়ে পাকা টমেটো ক্ষেতেই পচে গলে নষ্ট হচ্ছে। বিক্রি করা তো দূরের কথা বিনামূল্যে নিতেও নারাজ ক্রেতারা। ফলে টন টন টমেটো ফেলে দেওয়া হচ্ছে ভাগাড়ে।
উৎপাদন মূল্য ঘরে তুলতে না পেরে টমেটো চাষে অনাগ্রহী হয়ে উঠেছেন জেলার টমেটো চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে জেলায় ১৮৫ হেক্টর জমিতে টমেটো আবাদ করা হয়েছে।
যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ১০০ টন। নড়াইল সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়নের রুখালী মাঠের বিস্তীর্ণ জমিতে পাকা টমেটো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষকেরা আড়তে নিয়ে বিক্রি করতে না পেরে ভাগাড়ে ফেলে দিয়েছে।
উপজেলার রুখালী গ্রামের টমেটোচাষি মনির শেখ বলেন, আমি ঘেরের পাড়ে ৫ বিঘা জমিতে টমেটো আবাদ করেছি। এক একটা চারার পেছনে ২০ থেকে ২৫ টাকা খরচ হয়েছে।
টমেটো অনেক ভালো হয়েছে কিন্তু কেউ কিনছে না। প্রথম দিকে দাম বেশ ভালো ছিল। ৫০ টাকায় বিক্রি করেছিলাম। এখন টমেটো বাজারে নিয়ে গেলে আড়ৎদাররা বলছে এগুলো ফিরিয়ে নিয়ে যাও। জায়গা পরিষ্কার করো।
টমেটো চাষ করে খুব লস হলো। এলাকার কেউকে বললে তারা ও নিচ্ছে না। পচে পচে সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কাক ও পাখি খাদ্য এখন টমেটো।
একই গ্রামের মাহাবুব হোসেন বলেন, আমার জমিতে যে পরিমাণ টমেটো রয়েছে তা প্রায় ৫ থেকে ৬ টন হবে। গাছে দেওয়া বেড়া তো ভেঙে পড়ে যাচ্ছে। আমার একা না সবার একই অবস্থা।
গত বছর জুস কোম্পানি এসে ৫ টাকা কেজি দরে কিনতো। ওখান থেকে গাড়ি ভরে নিয়ে যেত। তাতেও লস হত না। এ বছর তারা ও আসছে না। বাজারে টমেটো নিলেও বিপদ। কোথাও ফেললে বাজার পরিষ্কার করে রেখে আসতে হচ্ছে। আর টমেটো চাষ করব না।
টমেটোচাষি খায়রুল বলেন, আমার এক বিঘা জমিতে টমেটো লাগানো। এতে আমার খরচ হয়ছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। আমি ২৫ হাজার টাকা ও বিক্রি করতে পারিনি। এক টাকা কেজি তাও কেউ নিচ্ছে না।
৮ টাকা কেজিও যদি বিক্রি করতে পারতাম তাতে ও লস হত না। আমাদের চালান বেঁচে যেত। আমরা ও বেঁচে যেতাম। এ বিলে ৫০ বিঘা জমিতে টমেটো আছে সবার একই অবস্থা।
চন্দন বিশ্বাস বলেন, টমেটোর যে দাম তাতে ভ্যান খরচও হচ্ছে না। চাষ করে এখন বিপদে পড়েছি। বাজারে নিয়ে পাশের খালে ফেলে দিতে হচ্ছে। গাছগুলো তুলে জমি পরিষ্কার করার শ্রমের মূল্যও হচ্ছে না।
নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, এ বছর টমেটোর বাম্পার ফলনের জন্য চাহিদা কম থাকায় বাজর দর কমে গেছে।
Discover more from কৃষি প্রতিদিন
Subscribe to get the latest posts sent to your email.