সমুদ্রপথে রপ্তানি ৫৮ হাজার টন ছাড়িয়েছে, আলু ও বাঁধাকপি শীর্ষে। যা আগের বছরের তুলনায় ৩১৩ শতাংশ বেশি প্রবৃদ্ধি।
নিজস্ব প্রতিবেদক | চট্টগ্রাম
বাংলাদেশে সবজি রপ্তানি খাতে এসেছে বড় সাফল্য। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে সমুদ্রপথে সবজি রপ্তানি তিনগুণেরও বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮,৭৬৬ মেট্রিক টনে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র জানায়, এ প্রবৃদ্ধি ৩১৩ শতাংশ।
এর মূল কারণ ছিল দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে সবজির মূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল থাকা, পরিবহন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, এবং সরকারি নজরদারির ফল।
বছরওয়ারি রপ্তানি পরিসংখ্যান (সমুদ্রপথে)
অর্থবছর | মোট রপ্তানি (মেট্রিক টন) | আলু | তাজা সবজি | হিমায়িত সবজি |
---|---|---|---|---|
২০২৪–২৫ | ৫৮,৭৬৬ | ৪০,৫৪৩ | ১৬,৯৫৯ | ১,২৬৪ |
২০২৩–২৪ | ১৪,২০২ | ১১,১২৭ | ১,৬৬৯ | ১,৪০৬ |
২০২২–২৩ | ৩৩,৯২৩ | ২৯,৫৬০ | ৩,১৭৬ | ১,১৮৭ |
২০২১–২২ | ৬০,৬৩৪ | ৫৩,০২৪ | ৫,৫৮২ | ২,০২৮ |
গত কয়েক বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বাড়তি পরিবহন খরচ ও অভ্যন্তরীণ বাজারের অস্থিরতার কারণে সবজি রপ্তানি কমে যায়। একসময় যেখানে আলু রপ্তানি ৫০ হাজার টনের আশপাশে থাকত, তা নেমে আসে কয়েক হাজার টনে। এতে রপ্তানিকারকেরা নিরুৎসাহিত হন।
তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাজার পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি জোরদার করা হয়, যার ফলে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল হয়। এ অবস্থায় রপ্তানিকারকেরা পুনরায় রপ্তানিতে সক্রিয় হন।
রপ্তানিতে শীর্ষে আলু, নতুন সম্ভাবনায় বাঁধাকপি
রপ্তানিকৃত সবজির তালিকায় আলু শীর্ষে, এরপর রয়েছে বাঁধাকপি। এছাড়া মিষ্টি কুমড়া, মরিচ, ফুলকপি, টমেটো, কচু, শিম, কাঁকরোল, পটোল ও মুখীকচুসহ নানা ধরনের সবজি রপ্তানি করা হয়।
রপ্তানিকৃত পণ্যের মধ্যে আলু —৪০ হাজার টনেরও বেশি রপ্তানি হয়েছে। এর পর রয়েছে বাঁধাকপি (১৫,৭০৬ টন), মিষ্টি কুমড়া (৭০০ টন), মরিচ (২৭৮ টন)। তথ্যসূত্র: চট্টগ্রাম উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র
কোথায় যাচ্ছে সবজি?
বাংলাদেশ থেকে সবজি মূলত রপ্তানি হচ্ছে—
- মালয়েশিয়া
- সংযুক্ত আরব আমিরাত
- সৌদি আরব
- সিঙ্গাপুর
- শ্রীলঙ্কা
- মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ
এছাড়া ফ্রোজেন করে কিছু সবজি ইউরোপ ও আফ্রিকাতেও পাঠানো হচ্ছে। প্রবাসী বাংলাদেশি এবং দক্ষিণ এশীয় রেস্তোরাঁগুলো প্রধান ক্রেতা।
বাংলাবান্ধা দিয়ে নেপালে আলু রপ্তানি
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ছাড়াও এবার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়েও ২০ হাজার টন আলু রপ্তানি হয়েছে নেপালে, যেখানে আগে এ বাজারটি ভারতের দখলে ছিল।
উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন— “দেশের বাজারে স্থিতিশীলতা এবং মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে পরিবহন ব্যয় কম থাকায় এবার রপ্তানি অনেক বেড়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে বাঁধাকপি, কচু রপ্তানিতেও সাফল্য এসেছে।”
বিমান রপ্তানিতে সংকট: ভর্তুকি কমছে, পরিবহন ব্যয় বেশি
চট্টগ্রাম ফ্রেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবল অ্যান্ড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স গ্রুপের সভাপতি মাহবুব রানা গনমাধ্যমকে বলেন— “বিমানে পর্যাপ্ত কার্গো স্পেস নেই, ফলে তাজা সবজি রপ্তানিতে সমস্যা হচ্ছে। ইউরোপ বা আমেরিকায় এক কেজি সবজি পাঠাতে পরিবহন খরচ ৬৫০–৭০০ টাকা, যেখানে ভারত করে ৩০০ টাকার কমে।”
তিনি আরও জানান, “সরকারি ভর্তুকিও ২০২৬ সালের মধ্যে তুলে নেওয়া হতে পারে, এতে করে রপ্তানির গতি আবার ব্যাহত হতে পারে।”
কোন জেলাগুলো থেকে সবজি রপ্তানি?
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, পার্বত্য এলাকা, যশোর, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, মেহেরপুর ও নরসিংদী জেলা থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে এসব সবজি। এসব এলাকায় সবজি উৎপাদনে উন্নত জাত ও সময়োপযোগী চাষপদ্ধতি অনুসরণ করে রপ্তানির উপযোগী মান নিশ্চিত করা হচ্ছে।
Discover more from কৃষি প্রতিদিন
Subscribe to get the latest posts sent to your email.