‘টেকসই চাষের বাইরে এখনো দেশের অর্ধেকের বেশি কৃষিজমি’

কৃষিজমির ব্যবস্থাপনায় মাটির অবক্ষয়, সেচ সংকট ও সার ব্যবহারে অসচেতনতা গুরুতর চ্যালেঞ্জ। বিবিএসের জরিপে কৃষি ব্যবস্থাপনায় ঝুঁকি, অবক্ষয় ও সেচ সংকটের চিত্র।

  • দেশের ৫৬% কৃষিজমি টেকসই চাষের বাইরে।
  • ৭২% জমিতে মাটির গুণগত মান হ্রাস।
  • সার ও কীটনাশক ব্যবহারে রয়েছে অসচেতনতা।
  •  বেশিরভাগ কৃষক পরিবার খাদ্য সংকটে পড়েনি।
  •  ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় উন্নতি হলেও সেচ ও দক্ষ শ্রমে ঘাটতি রয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা 

বাংলাদেশের ৫৬ শতাংশ কৃষিজমি এখনও টেকসই ব্যবস্থাপনার আওতায় আসেনি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে, মাটি অবক্ষয়, অনিয়ন্ত্রিত সার ও কীটনাশক ব্যবহার এবং সেচ সংকট এখনো দেশের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার বড় চ্যালেঞ্জ।

আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘উৎপাদনশীল ও টেকসই কৃষি জরিপ ২০২৫’ প্রকাশ করা হয়।

কী বলছে জরিপ?

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী:

  • মাত্র ৪৪.৩৭% জমিতে টেকসই পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে।
  • ৭৮.৭৯% কৃষিজমি গত তিন বছরে অন্তত একবার লাভজনকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।
  • ৩২% কৃষক এখনো কৃষিজমির সুরক্ষার বাইরে রয়েছেন।
  • ৭২.৭৫% কৃষিজমি মাটির অবক্ষয়ের শিকার।

জমির গুণগত মান হ্রাস পাওয়ার ফলে দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

 কৃষি ব্যবস্থাপনায় সীমাবদ্ধতা

জরিপে আরও উঠে এসেছে কৃষিজমি ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দুর্বলতা:

  • ৮১.৮৬% জমি পর্যাপ্ত সেচ পেলেও অবশিষ্ট অংশ এখনও সেচের অভাবে ভুগছে।
  • মাত্র ৫৬.৯৫% কৃষক পরিবার সার ব্যবহারে প্রস্তাবিত পদ্ধতির অন্তত দুটি অনুসরণ করে।
  • ৪৮.৬৩% কৃষিজমিতে কীটনাশক ব্যবহারে টেকসই ব্যবস্থাপনা নেই।
  • ৬০.১২% জমি এমন অঞ্চলে, যেখানে অদক্ষ শ্রমিকদের বেশি পারিশ্রমিক দিতে হয়।

এসব তথ্য প্রমাণ করে যে কৃষি উৎপাদনে অপচয়, ঝুঁকি ও পরিবেশগত ক্ষতি এখনও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। এছাড়া  সার ব্যবহারের প্রস্তাবিত ৮টি পদ্ধতির মধ্যে দুটি পদ্ধতি অনুসরণ করেছে। এ থেকে দেখা যায়, একটি বড় অংশ এখনো রাসায়নিক সার ব্যবহারের সচেতন নয়।

কিছু ইতিবাচক দিক

  • ৯৮.৮৩% কৃষক পরিবার গত বছর খাদ্যের সংকটে পড়েনি।
  • ৮৯.৩৫% কৃষিজমি স্থায়ী মালিকানাধীন, যা কৃষির স্থায়িত্বে সহায়ক।
  • ৬৯.১৬% কৃষিজমি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার আওতায় রয়েছে (ঋণ, বীমা বা বৈচিত্র্যকরণ সুবিধা)।
অনুষ্ঠানে বক্তাদের মতামত

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আকতার।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টেকসই কৃষি পরিসংখ্যান প্রকল্পের পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। আরও বক্তব্য দেন: কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুবুল হক পাটোয়ারী, পরিসংখ্যান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী, বিবিএসের কৃষি উইং পরিচালক আলাউদ্দিন প্রমুখ।

গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি:

“দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়লেও টেকসই ব্যবস্থাপনায় গড়পড়তা অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। মাটির গুণগত অবনতি ও সঠিক জ্ঞানের অভাব বড় বাধা।” — মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, পরিচালক, এসএএস প্রকল্প

“পরিসংখ্যানভিত্তিক নীতিনির্ধারণে এই জরিপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।” — আলেয়া আকতার, সচিব, পরিসংখ্যান বিভাগ


Discover more from কৃষি প্রতিদিন

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

মতামত দিন