ব্র্যান্ডিং করতে শ্রীপুরে কাঁঠালের ভাস্কর্য, চাহিদা দেশে-বিদেশে; মৌসুমে লক্ষাধিক টনের বেচাকেনা।
নিজস্ব প্রতিবেদক | গাজীপুর
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার কাঁঠাল এবার পেয়েছে ভৌগোলিক নির্দেশক (GI) পণ্যের স্বীকৃতি। দেশের জনপ্রিয় এই ফলটি এখন পৌঁছে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অন্তত ১৫টি দেশে।
মৌসুম শুরু হতেই শ্রীপুরের বিভিন্ন স্থানে জমে ওঠে কাঁঠালের বাজার। স্বাদ, সুগন্ধ আর গুণগত মানের কারণে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে শ্রীপুরের কাঁঠাল। বিক্রি হয় রেকর্ড পরিমাণ কাঁঠাল।
‘সবুজে শ্যামলে শ্রীপুর, মিষ্টি কাঁঠালে ভরপুর’
গাজীপুর জেলা প্রশাসন শ্রীপুরকে কাঁঠালের ব্র্যান্ডিং করতে উপজেলা পরিষদে স্থাপন করেছে কাঁঠালের ভাস্কর্য। জেলার স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে—‘সবুজে শ্যামলে শ্রীপুর, মিষ্টি কাঁঠালে ভরপুর’।
এ অঞ্চল থেকে প্রতি বছর গড়ে আড়াই লাখ মেট্রিক টন কাঁঠাল উৎপাদিত হয়। প্রধানত তিন জাতের কাঁঠাল চাষ হয়: খাজা, গালা ও দুরসা।
ঢাকাসহ দেশজুড়ে সরবরাহ, হাটে হাটে কাঁঠালের মেলা
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কঘেঁষা শ্রীপুরের জৈনা বাজার এখন দেশের সবচেয়ে বড় কাঁঠালের হাট। এছাড়া মাওনা, টেপিরবাড়ি, রাজাবাড়ি, ভবানীপুর– এসব জায়গায় প্রতিদিনই বসে কাঁঠালের জমজমাট বাজার।
ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে কাঁঠাল কেনাবেচা। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা এসে এখানে কাঁঠাল কিনে নিয়ে যান কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, হেমায়েতপুর, উত্তরা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
কাঁঠাল যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে
জানা গেছে, শ্রীপুর ও কাপাসিয়ার কাঁঠাল এখন নিয়মিতভাবে যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ওমান, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ভারত ও পাকিস্তানে রপ্তানি হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী কামাল হোসেন জানান, ‘‘কাঁঠালের সংরক্ষণ সুবিধা না থাকায় বিপুল পরিমাণ কাঁঠাল নষ্ট হয়। হিমাগার না থাকায় মৌসুমের শেষ দিকে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হয় চাষিদের।’’
মৌসুমি চাষে কর্মসংস্থান বাড়ছে, কিন্তু নেই পর্যাপ্ত সুবিধা
প্রতি মৌসুমে শত শত মানুষ এই কাঁঠাল-ভিত্তিক কৃষি ব্যবসায় জড়িত। গাছ বিক্রি, বাগান পরিচর্যা, কাঁঠাল সংগ্রহ, পরিবহন, বাজারজাতকরণে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান তৈরি হয়।
তবে কাঁঠাল চাষিদের অভিযোগ— নেই পর্যাপ্ত সরকারি প্রশিক্ষণ, ঋণ, বা হিমাগার সুবিধা। সঠিক বাজারমূল্যও নিশ্চিত হয় না অনেক সময়। ফলে ফড়িয়াদের কাছে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন অনেক কৃষক।
জেলায় উৎপাদন ২.৫ লাখ টন ছাড়িয়েছে
গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জেলায় মোট ৯ হাজার ১০৩ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ হয়েছে, উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৭৯২ মেট্রিক টন।
- শ্রীপুরে ৩৫৫২ হেক্টর।
- কাপাসিয়ায় ১৭৬০ হেক্টর।
- সদর উপজেলায় ২০৫০ হেক্টর।
- কালীগঞ্জে ১১৯১ হেক্টর।
- কালিয়াকৈরে ৫৫০ হেক্টর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘চাষিদের প্রশিক্ষণ, মান নিয়ন্ত্রণ ও বাজার সংযোগে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় এ অঞ্চলের কাঁঠাল বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে।’’
জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি
নানা সময়ে দেশের বিভিন্ন পণ্য জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও গাজীপুরের শ্রীপুরের কাঁঠালকে সম্প্রতি ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্যের এবার স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার।
আর পড়ুন
- হিমসাগর আমের জিআই স্বীকৃতি পেল মেহেরপুর
- দিনাজপুরের লিচুর বাজার ৭০০ কোটি টাকায়, জিআই স্বীকৃতিতে রফতানির সম্ভাবনা
Discover more from কৃষি প্রতিদিন
Subscribe to get the latest posts sent to your email.