দিনাজপুরের লিচুর বাজার ৭০০ কোটি টাকায়, জিআই স্বীকৃতিতে রফতানির সম্ভাবনা

বেদেনা জাতের লিচু পেল ভৌগলিক নির্দেশক (GI) স্বীকৃতি, কৃষক-ব্যবসায়ীদের আশা বিদেশে রফতানির মাধ্যমে বাড়বে আয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, দিনাজপুর:

বাংলাদেশের লিচু চাষের রাজধানী দিনাজপুর—এই জেলার লিচু স্বাদ, গন্ধ, রসালোত্ব ও মিষ্টতার জন্য দেশজুড়ে প্রসিদ্ধ। এবার জেলার বেদেনা জাতের লিচু পেয়েছে ভৌগলিক নির্দেশক (GI) পণ্যের স্বীকৃতি, যা এই লিচুর বাজার সম্প্রসারণে আনতে পারে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ৫ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হবে প্রায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন লিচু—যার বাজারমূল্য প্রায় ৭০০ কোটি টাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে।

লিচুর রাজ্য: কালিতলা বাজার

জেলার প্রাণকেন্দ্র কালিতলা বাজার এখন লিচুর রঙে রঙিন। মাদ্রাজি, বোম্বাই, বেদেনা, চায়না থ্রি, হাড়িয়া, কাঁঠালি, মোজাফফরী—এমন নানা জাতের লিচুর সরবরাহে জমজমাট বাজার।

বাজারদর বলছে:

  • বেদেনা: ৬০০–৮০০ টাকা/শ
  • চায়না থ্রি: ১৩০০–১৫০০ টাকা/শ
  • হাড়িয়া/কাঁঠালি: ৬০০–৯০০ টাকা/শ
  • বোম্বাই: ২৫০–৩৫০ টাকা/শ
  • মাদ্রাজি: ২০০–২৫০ টাকা/শ

দাম কম, তবুও বিক্রি ভালো

কৃষকরা বলছেন, এবার দাম কিছুটা কম হলেও ফলন ভালো হওয়ায় তারা মোট লাভে থাকবেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পোকার আক্রমণ না থাকায় লিচু নষ্টের হারও কম। ব্যবসায়ীরাও জানালেন, এবার ঢাকায় পাঠানোর পর লিচু ভালো থাকছে, ফলে তারা সন্তুষ্ট।

ঢাকা থেকে আসা সিরাজুল ইসলাম বলেন, “বেদেনা লিচুর স্বাদ অতুলনীয়। আগে দাম বেশি থাকলেও এবার তুলনামূলক কম। GI স্বীকৃতি পাওয়ার পর আগ্রহ আরও বেড়েছে।”

GI স্বীকৃতির সম্ভাবনা

বেদেনা জাতের লিচুর GI স্বীকৃতি পাওয়া এই জেলার জন্য একটি বড় মাইলফলক। কৃষকরা বলছেন, “এ স্বীকৃতি যদি রফতানিতে কাজে লাগে, তাহলে দাম আরও বাড়বে। আমরা বেশি লাভ করতে পারব।”

উপজেলা কৃষক নয়ন ইসলাম বলেন, “আমরা অনেকদিন ধরে দাবি করছিলাম GI স্বীকৃতি ও রফতানির জন্য। GI তো হলো, এখন সরকারের কাছে অনুরোধ—বিদেশে রফতানির উদ্যোগ নেওয়া হোক।”

উৎপাদনে সাফল্য, এবার রফতানির লক্ষ্য

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আনিছুজ্জামান জানান, “এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। জেলায় উৎপাদিত বেদেনা জাতের লিচু এখন GI পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এটা বিশ্ববাজারে দিনাজপুরের লিচুকে পরিচিত করবে।”

মতামত দিন