আঙুরের স্বর্গ: ঢাবির সাবেক ছাত্র রংপুরের মাসুদুরের সাফল্য

ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর মাসুদুর রহমান শিক্ষকতা না পেয়ে নিলেন কৃষিকে পেশা, ১০ শতকে চাষ করছেন রাশিয়া-ইতালি-ভারত থেকে আনা বিদেশি আঙুরসহ বারোমাসি ফল

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করে চাকরির পেছনে না ছুটে মাসুদুর রহমান (৩৫) বেছে নিয়েছেন কৃষি। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার খেজমতপুর গ্রামে নিজ বাড়ির ১০ শতক জমিতে তিনি সফলভাবে বিদেশি ২৫ জাতের আঙুর উৎপাদন করে তাক লাগিয়েছেন। পাশাপাশি ১ হাজার ২০০ বর্গফুটের ছাদে গড়ে তুলেছেন বারোমাসি ফলের বাগান—থাই কমলা থেকে ড্রাগনফল, জামরুল থেকে শরিফা; সবই আছে সেখানে।

আঙুরের স্বর্গ

বাঁশ ও সুতায় বানানো মাচায় ঝুলছে থোকা থোকা আঙুর—কোনোটির রঙ হালকা সবুজ, কোনোটির রক্তিম, আবার কোনোটির লম্বাটে আকার। রাশিয়া, ইতালি ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা এসব চারাগাছের প্রায় ৫০টি গাছে এ বছর ফল এসেছে। ইতিমধ্যে তিন মণ আঙুর ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে তিনি পেয়েছেন ৬০ হাজার টাকা। মাচা তৈরি থেকে চারা কেনা—সব খরচ মিলিয়ে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। আরও তিন মণ আঙুর গাছে ঝুলছে, দর্শনার্থীদের মধ্যে তিনি দুই মণ বিতরণও করেছেন।

ছাদে ‘ফলের গবেষণা ল্যাব’

ছাদের বাগানে রয়েছে থাই কমলা, মিষ্টি জলপাই, আমড়া, আনার, শরিফা, ড্রাগনসহ ১০ জাতের ফল। মাসুদুর জানালেন, “আমি চাই দেশের প্রতিটি বাড়িতে অন্তত একটা মিষ্টিজাত আঙুরগাছ থাকুক। আগ্রহীরা এলে বিনা মূল্যে চারা দিই।”

কৃষিকে গবেষণার মাঠ

মাসুদুরের স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণা করা। সে সুযোগ না পেয়ে কৃষিক্ষেত্রকেই গবেষণার মাঠ বানিয়েছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার বলেন, “উচ্চশিক্ষিত কেউ যখন কৃষিকে পেশা করেন, সেটি শুধু উদাহরণ নয়—অনুপ্রেরণাও। তাঁর আঙুর দেখে বোঝার উপায় নেই এগুলো বিদেশি জাত।”

বহুমুখী আয়

চার একর জমিতে তিনি আলু ও কচুর মুখি চাষ করেন—শুধু কচুর মুখি থেকেই গত বছর লাভ করেছেন প্রায় ৫ লাখ টাকা। বাড়ির পাশের আরও ১৭ শতকে ১৫ জাতের বিদেশি ফলের গাছের নিচে সাথি ফসল হিসেবে আদা চাষ করে পেয়েছেন ৮০ হাজার টাকা।

প্রতিদিন শতাধিক দর্শনার্থী তাঁর বাগান দেখতে আসেন। মাসুদুর বলেন, “স্বপ্ন পূর্ণ হবে তখনই, যখন আরও তরুণ আমার পথ ধরে কৃষিতে আসবে।”

মতামত দিন