স্টাফ রিপোর্টার
বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প ও স্বাস্থ্য খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে এগোনোর কথা থাকলেও, ন্যানো প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট স্থাপনের উদ্যোগ শুরুর আগেই থমকে গেছে। ২০২৩ সালের ১ জুলাই অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পে ইতোমধ্যে দুই কোটি টাকা খরচ হলেও এখন তা বন্ধ করার উদ্যোগ চলছে।
কৃষি থেকে শিল্প—সবখানেই ন্যানো প্রযুক্তির সম্ভাবনা
বিশ্বজুড়ে ন্যানো প্রযুক্তি এখন শুধু গবেষণার বিষয় নয়, বরং কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য, খাদ্যনিরাপত্তা, শক্তি ও পরিবেশে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
- কৃষিতে ন্যানো সার ও ন্যানো কীটনাশক ফসল উৎপাদন বাড়াতে পারে
- টেক্সটাইল খাতে তৈরি পোশাকের গুণগত মান ও রপ্তানি বাড়াতে পারে
- স্বাস্থ্যখাতে স্মার্ট ড্রাগ ডেলিভারি ও ডায়াগনস্টিকস নতুন দিগন্ত খুলতে পারে
কিন্তু এসব সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ দেওয়ার আগেই প্রকল্পের কার্যক্রম থমকে যাচ্ছে।
অনুমোদন, ব্যয় আর হঠাৎ থেমে যাওয়া
সাভারে দুই একর জমি নির্বাচন করে সাইট সিলেকশন, মাটি পরীক্ষা, নকশা, অফিস পরিচালনা—সব মিলিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৮০ কোটি টাকা।
তবে চলতি বছরের ২০ আগস্ট পরিকল্পনা কমিশনের সভায় প্রকল্পটি ‘অসমাপ্ত রেখে সমাপ্ত’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষা।
বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের গঠিত কমিটি জানিয়েছে—
- এই প্রকল্পের সঙ্গে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের দ্বৈততা নেই
- কার্যক্রমও সঠিকভাবে নির্ধারিত হয়েছে
তবুও হঠাৎ প্রকল্প বন্ধের যৌক্তিক ব্যাখ্যা মেলেনি।
অর্থনীতিবিদদের মত
অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরি বলেন, “প্রকল্পের যৌক্তিকতা থাকলে এটা চালু রাখা উচিত। কারণ মনে রাখতে হবে, ইতোমধ্যে দুই কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ভালো হলে বন্ধ করার যৌক্তিকতা নেই।”
সরকারি কর্মকর্তাদের অবস্থান- সাবেক সিনিয়র সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, তিনি আর ওই মন্ত্রণালয়ে নেই, তাই মন্তব্য করার এখতিয়ারও নেই।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “ন্যানো টেকনোলজি দেশের জন্য দরকার। আমরা এটা চালু রাখব। তবে চলমান প্রকল্পের নকশায় সমস্যা আছে।”
কেন দরকার ন্যানো টেকনোলজি ইনস্টিটিউট?
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন বলছে— ন্যানো প্রযুক্তি নিয়ে তাদের তিন শতাধিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে
- একটি পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউট হলে কৃষি, শিল্প, টেক্সটাইল, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য খাত উপকৃত হবে
- মেধাবী শিক্ষার্থীরা দেশে বসেই আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা করতে পারবে
- নতুন উদ্যোক্তা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, কর্মসংস্থান বাড়বে
- ন্যানো প্রযুক্তিনির্ভর পণ্যের আমদানি নির্ভরতা কমবে, রপ্তানির নতুন বাজার সৃষ্টি হবে
ন্যানো প্রযুক্তি বাংলাদেশে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিল্প ও পরিবেশ খাতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে পারত। কিন্তু প্রকল্পটি শুরুর আগেই থমকে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে—অমূল্য সময় ও অর্থ নষ্ট হলো কেন?
Discover more from কৃষি প্রতিদিন
Subscribe to get the latest posts sent to your email.