বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ ও ভর্তুকি বাড়ানো ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
কয়েক বছর ধরে সার, কীটনাশক, জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণের মূল্য বেড়েছে। তবে কৃষি উৎপাদন খরচ বাড়লেও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। হিমাগারের অভাবে অতিরিক্ত ফসল সংরক্ষণও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে মৌসুমে কম দামে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এতে লাভবান হচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগী ও ব্যবসায়ীরা।
বিশ্ববাজারে সারের দামের ঊর্ধ্বগতি
বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৫ সালের মে-জুলাইয়ে সার ও কৃষি উপকরণের দামে বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটেছে।
- ডিএপি সার: মে মাসে ৬৬৯ ডলার, জুনে ৭১৫ ডলার, জুলাইয়ে ৭৩৬ ডলার (২০২৪ সালে ছিল ৫৩৭ ডলার)।
- টিএসপি সার: মে মাসে ৫৪১.৫ ডলার, জুনে ৬৪১.৩ ডলার, জুলাইয়ে ৬৫৫ ডলার (২০২৪ সালে ছিল ৪৫০ ডলার)।
- ইউরিয়া সার: মে মাসে ৩৯২ ডলার, জুনে ৪২০.৫ ডলার, জুলাইয়ে ৪৯৬ ডলার (২০২৪ সালে ছিল ৩১৩.৭ ডলার)।
- পটাশিয়াম ক্লোরাইড: মে-জুলাইয়ে ৩৬২-৩৬৩ ডলার (২০২৪ সালে ছিল ৩০৭ ডলার)।
অন্যদিকে, জিংক, অ্যালুমিনিয়াম ও কপারের দামও বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আমদানিনির্ভরতার কারণে এ প্রভাব সরাসরি পড়ছে দেশের কৃষিতে।
কৃষকের আক্ষেপ: খরচ উঠছে না
রংপুরের কৃষক জমির উদ্দিন বলেন,”ধান, আলু ও সবজি উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। কিন্তু বাজারে ন্যায্যমূল্য মিলছে না। সরকার ধান কিনেছে ১,৪৫০ টাকায়, অথচ আমরা বিক্রি করেছি ৯০০-১,০০০ টাকায়। লাভবান হচ্ছে মিল মালিকরা, কৃষক নয়।”
নীলফামারীর কৃষক আব্দুর রহিম অভিযোগ করে বলেন,”বেসরকারি কোম্পানির বীজের দাম প্রতি বছরই বাড়ছে। বাজার মনিটরিং না থাকলে কৃষকদের দুর্দশা আরও বাড়বে। কীটনাশকে ভর্তুকি দেওয়া দরকার।”
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের চাষি আব্দুল মালেক বলেন,”আমরা মাথার ঘাম মাটিতে ফেলে উৎপাদন করি। কিন্তু ফসলের সঠিক দাম পাই না। ব্যবসায়ীরাই লাভবান হয়।”
বিশেষজ্ঞদের মতামত
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন,”ধানের দাম সরকার ঠিক করলেও কৃষক বাজারে কম দামে বিক্রি করছেন। টমেটো, শসা, আলু—কোনো ক্ষেত্রেই কৃষক তার উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না। সরকারের উচিত সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ, প্রকিউরমেন্ট বৃদ্ধি এবং কৃষকদের জন্য স্টোরেজ সুবিধা নিশ্চিত করা।”
কৃষি উপকরণ ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব
ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার গ্রুপের এমডি কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, “আমদানিনির্ভরতা কমাতে হলে দেশে সার ও কীটনাশক উৎপাদন জরুরি। কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা দরকার, যাতে উৎপাদন, সরবরাহ ও বিতরণে শৃঙ্খলা আনা যায়।”
Discover more from কৃষি প্রতিদিন
Subscribe to get the latest posts sent to your email.