বিশেষ প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ:
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় শীতের আগাম সবজিতে ভরে উঠেছে মাঠ। তবে এসব সবজিকে পোকার আক্রমণ ও রোগবালাই থেকে রক্ষা করতে কৃষকরা জমিতে ব্যবহার করছেন অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় রাসায়নিক কীটনাশক, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষি বিশেষজ্ঞ বা কৃষি অফিসের পরামর্শ ছাড়াই অনুমানের ওপর ভিত্তি করে এসব বিষ ব্যবহার করা হচ্ছে। সকালে এক দফা, বিকেলে আরেক দফা—ফসল বাঁচাতে কৃষকরা এখন বিষের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।
অনুমানের ওপর চলছে বিষ প্রয়োগ
মাধবপুরের চৌমুহনী, বহরা, জগদীশপুর, শাহজাহানপুর ও ছাতিয়াইনসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, প্রান্তিক সবজিচাষিরা টমেটো, বেগুন, শিম, ফুলকপি থেকে শুরু করে ধানক্ষেতেও কীটনাশক প্রয়োগ করছেন।
এসব বিষ প্রয়োগের মাত্রা সম্পর্কে জানতে চাইলে অধিকাংশ কৃষক জানান, তারা অনুমানের ওপর ভিত্তি করে কীটনাশক ব্যবহার করেন।
বহরা গ্রামের একজন সবজিচাষি বলেন, “এটি দিলে পোকা মরবে। এটুকুই জানি। অন্যরা যেভাবে ব্যবহার করেন, আমরাও সেভাবেই দিই।”
চৌমুহনীর কৃষক মো. শফিক মিয়া বলেন, “আগে প্রতিবছর একবার বা দুইবার কীটনাশক দিতাম। ভালো ফলনের আশায় এখন প্রতি সপ্তাহেই দিচ্ছি। এতে মাটির রং বদলে গেছে।”
পরিবেশ ও মাটির ওপর ভয়ংকর প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক প্রয়োগ মাটির জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
একটি ডিগ্রি কলেজের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কবির হোসেন গনমাধ্যমকে বলেন, “রাসায়নিক কীটনাশকের সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হলো এটি মাটির জীববৈচিত্র্যকে হত্যা করে। কেঁচো, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া—এই জীবগুলোই মাটির প্রাণ। বিষ প্রয়োগে এরা মারা গেলে মাটি নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে, তার গঠন ও উর্বরতা হারিয়ে ফেলে। দীর্ঘ মেয়াদে এই বিষ ভূগর্ভস্থ পানিতেও মিশে মানুষের শরীরে পৌঁছে যায়।”
বাড়ছে ক্যান্সার ও কিডনি রোগের ঝুঁকি
জমিতে ছিটানো এই বিষ সরাসরি সবজির মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইমরুল হাসান জাহাঙ্গীর গনমাধ্যমকে বলেন, “এইসব রাসায়নিক বিষ সরাসরি মানুষের শরীরে প্রভাব ফেলে। সবজির মাধ্যমে বিষ শরীরে জমে কিডনি, লিভার ও স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাপক ক্ষতি করে। দীর্ঘ মেয়াদে এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।”
করণীয় কী?
বিশেষজ্ঞরা এই সংকট থেকে উত্তরণে চারটি পদক্ষেপকে জরুরি বলে মনে করছেন: জৈব বালাইনাশক ব্যবহার, মিশ্র ফসল চাষ, কীটের প্রাকৃতিক শত্রু পোকা সংরক্ষণ এবং কৃষকদের ব্যাপক প্রশিক্ষণ।
মনতলা শাহজালাল সরকারি কলেজের প্রভাষক মারিয়া আক্তার গনমাধ্যমকে বলেন, “অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করতে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তারা যেন জানেন কোন কীটনাশক অনুমোদিত, কোনটা নয়। দ্বিতীয়ত, কৃষকরা নিজেরা নিমপাতা, আদা, রসুন, মরিচের নির্যাস ব্যবহার করে প্রাকৃতিক বালাইনাশক তৈরি করতে পারেন। এসব সম্পূর্ণ জৈবিক এবং পরিবেশবান্ধব।”
এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা সজীব সরকার গনমাধ্যমকে বলেন, “কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এটি বাধ্যতামূলক পর্যায়ে নিতে হবে সবার স্বার্থে। কৃষি অফিস থেকে অনুমোদিত কীটনাশকের তালিকা সরবরাহ করা হচ্ছে। এর বাইরে যেন কেউ ব্যবহার না করে।”
Discover more from কৃষি প্রতিদিন
Subscribe to get the latest posts sent to your email.