নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙামাটি
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে কাজুবাদাম চাষে নতুন গতি এসেছে। সরকারি সহায়তা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রচেষ্টায় রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে চাষিরা এখন আগ্রহী হচ্ছেন কাজুবাদাম চাষে।
২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ৪১ কোটি টাকার একটি প্রকল্পে ১,২০০ চাষিকে ২ লাখ ৭৬ হাজার চারা সরবরাহ করা হয়েছে। এর ফলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে কাজুবাদামের চাষ।
রাঙামাটি সদর উপজেলার বালুখালী ইউনিয়নের চাষি চিয়ালজল পাংখোয়া ২০২১ সালে আড়াই একর জমিতে কাজুবাদাম চাষ শুরু করেন। চলতি মৌসুমে তিনি ৬০ কেজি কাঁচা কাজুবাদাম ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। তাঁর আশা—সব গাছে ফল আসলে প্রতি বছর কয়েক লাখ টাকা আয় করা সম্ভব হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মুনিরুজ্জামান জানান, শুধু রাঙামাটি জেলাতেই চলতি মৌসুমে ৩৬২ হেক্টর জমিতে ফলন এসেছে। তিনি বলেন, “পার্বত্য অঞ্চলে কাজুবাদামের সম্ভাবনা অনেক, আমরা আরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছি।”
রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা দেশ–বিদেশ থেকে ২০–২৫ জাতের কাজুবাদাম গাছ সংগ্রহ করে উচ্চফলনশীল ও পাহাড়ের উপযোগী জাত উদ্ভাবনে কাজ করছি। অধিকাংশ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।”
এদিকে রাঙামাটি শহরের তবলছড়ি এলাকায় ‘ফেরদৌস স্টোর’ নামক একটি কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে উঠেছে। কারখানার মালিক মো. সাব্বির আহমেদ বলেন, “৪৫ বছর ধরে কাজ করছি। ২০১৮ সাল থেকে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে উৎপাদন বেড়েছে। এখন দৈনিক ৮০-১০০ কেজি প্রক্রিয়াজাত করি।”
তিনি জানান, কাঁচামালের সংকট কিছুটা কেটেছে বলে রাঙামাটির মানিকছড়িতে বিসিক এলাকায় একটি নতুন কারখানা স্থাপন করছেন। নতুন কারখানার মাধ্যমে দৈনিক ২০০-৩০০ কেজি পর্যন্ত উৎপাদন সম্ভব হবে বলে আশা করছেন তিনি।
কারখানার কর্মীদের মতে, ৫ কেজি ফলন থেকে গড়ে ১ কেজি কাজুবাদাম পাওয়া যায়, যা বাজারে ১,৪০০ থেকে ১,৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এভাবে পাহাড়ে কাজুবাদামের চাষ ও প্রক্রিয়াজাত শিল্প একটি লাভজনক খাতে পরিণত হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Discover more from কৃষি প্রতিদিন
Subscribe to get the latest posts sent to your email.