জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ, সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের কৃষিখাতে প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। খরা, অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল বা অনাবৃষ্টি—প্রতিটি জলবায়ু দুর্যোগ কৃষিকে করে তোলে ঝুঁকিপূর্ণ ও অনির্দেশ্য।
এই অবস্থায় কৃষিকে লাভজনক ও টেকসই করতে পরিবেশবান্ধব, কার্বনমুক্ত এবং আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর চাষাবাদ হয়ে উঠছে সময়ের দাবি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্বনমুক্ত কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশ বছরে কোটি কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন মাঠ পর্যায়ে প্রযুক্তির সঠিক বিস্তার ও কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি।
প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ
গাজীপুরের শ্রীপুরে স্থাপিত সিসিডিবি ক্লাইমেট সেন্টার এই সচেতনতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এখানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন উন্নত কৃষি প্রযুক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি ব্যবহারিক প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে কৃষি কর্মকর্তাদের।
সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর মো. কামাল হোসেন বলেন, “আমরা মূলত পাঁচটি বিষয়ে কাজ করছি—সাশ্রয়ী প্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পানি ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু সহনশীল চাষ এবং কৃষকের সক্ষমতা বৃদ্ধি।”
এই কেন্দ্র থেকে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে বাস্তব জ্ঞান নিয়ে কাজ করছেন, যা কার্বন ও পরিবেশবিষয়ক ঝুঁকি হ্রাসে সহায়ক হচ্ছে।
কার্বন সিংক হিসেবে ফলের বাগান ও বনভূমি
ক্লাইমেট স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট (CSAWM) প্রকল্পের পরিচালক খন্দকার মুহাম্মদ রাশেদ ইফতেখার জানান, দেশের বিভিন্ন ফরেস্ট স্টেশন ও ফলের বাগানকে কার্বন সিংক হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এই গাছপালা বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ভূমিকা রাখছে। সঠিক ডেটা ও হিসাবনিকাশের আওতায় আনলে আন্তর্জাতিক কার্বন ক্রেডিট মার্কেট থেকে বাংলাদেশ বৈদেশিক আয় করতে পারবে।
ড্রিপ ও বারিড পাইপ সেচে সাশ্রয় ও পরিবেশ রক্ষা
পানি-সংকটাপন্ন এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ড্রিপ ইরিগেশন ও বারিড পাইপ প্রযুক্তি। এতে যেমন সেচ খরচ কমে, তেমনি কমে পানি অপচয় ও কার্বন নির্গমন।
FLIP প্রকল্পের পরিচালক ড. তৌফিকুর রহমান বলেন,“জলবায়ু উপযোগী প্রযুক্তির মধ্যে আমরা বারিড পাইপ, ড্রিপ ইরিগেশন এবং সৌরভিত্তিক সেচের উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।”
জলবায়ু দুর্যোগে ফসলহানির চিত্র
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে দেশের ২৩টি জেলায় একযোগে বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে প্রায় ৩,৫০০ কোটি টাকার ফসলহানি হয়। এমন পরিস্থিতিতে কৃষি খাতকে টেকসই করতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার ও আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ফসলের জাত উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।
Discover more from কৃষি প্রতিদিন
Subscribe to get the latest posts sent to your email.