ব্রি উদ্ভাবিত নতুন ৩ ধানের জাত: লবণ সহনশীল, ব্লাস্ট প্রতিরোধী ও উফশী বোরো ধান

জাতীয় বীজ বোর্ডে অনুমোদিত ব্রি-র নতুন তিনটি ধানের জাত—ব্রি ধান ১১২ (লবণ সহনশীল), ব্রি ধান ১১৩ (উচ্চ ফলনশীল বোরো) এবং ব্রি ধান ১১৪ (ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী)। কৃষিতে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত।

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত আরও তিনটি ধানের জাত অনুমোদন পেয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ডের ১৪৪তম সভায়। নতুন জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে একটি লবণাক্ততা সহনশীল আমন ধান, একটি উচ্চ ফলনশীল বোরো ধান এবং একটি ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ধান।

বুধবার (১৮ জুন) কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এই তিন জাতসহ ব্রি এখন পর্যন্ত ১২১টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে, যার মধ্যে ৮টি হাইব্রিড জাত।

লবণাক্ততা সহনশীল ধান: ব্রি ধান ১১২

  • প্রধান বৈশিষ্ট্য: চারা অবস্থায় ১২ ডিএস/মি ও পরবর্তী পর্যায়ে ৮ ডিএস/মি পর্যন্ত লবণ সহনশীল।
  • ফলন: হেক্টরে ৪.১৪–৬.১২ টন।
  • জীবনকাল: ১২০–১২৫ দিন।
  • গঠন: গাছের উচ্চতা ১০৩–১০৫ সেমি, কাণ্ড মজবুত, শীষে গড়ে ২১০টি দানা।
  • বিশেষ দিক: গাছ ঢলে পড়ে না, চাল ঝরঝরে, শীষে দানার সংখ্যা বেশি।
  • অতিরিক্ত সুযোগ: দ্রুত কর্তনযোগ্য হওয়ায় ফসলের পর সূর্যমুখী ও সরিষা আবাদের সুযোগ।

 উচ্চ ফলনশীল বোরো ধান: ব্রি ধান ১১৩

  • প্রধান বৈশিষ্ট্য: ব্রি ধান ২৯-এর বিকল্প, বেশি ফলনশীল ও ঝরঝরে চাল।
  • ফলন: গড়ে ৮.১৫ টন/হেক্টর (সর্বোচ্চ ১০.১ টন)।
  • জীবনকাল: ১৪৩ দিন।
  • চাল: মাঝারি চিকন, সাদা রঙ, অ্যামাইলোজ ২৮%, প্রোটিন ৮.৪%।
  • বিশেষ দিক: পাতায় সবুজ রঙ বেশি দিন থাকে, গাছ শক্ত এবং হেলে পড়ে না।

ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ধান: ব্রি ধান ১১৪

  • প্রধান বৈশিষ্ট্য: বোরো মৌসুমের দীর্ঘ মেয়াদি জাত, ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী।
  • ফলন: গড়ে ৭.৭৬ টন/হেক্টর (সর্বোচ্চ ১০.২৩ টন)।
  • জীবনকাল: ১৪৯ দিন।
  • চাল: মাঝারি মোটা, সোনালি রঙের, অ্যামাইলোজ ২৭%, প্রোটিন ৭.৭%।
  • বিশেষ দিক: পিআই৯ জিন থাকায় ব্লাস্ট প্রতিরোধ ক্ষমতা স্কোর ০ পর্যন্ত।
কৃষি খাতের জন্য সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

ব্রি-র এই নতুন তিনটি জাত দেশের বিভিন্ন agro-ecological জোনে চাষযোগ্য হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কৃষিবিদরা। বিশেষ করে উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলে ব্রি ধান ১১২ একটি গেম চেঞ্জার হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে বোরো মৌসুমে উচ্চ ফলন এবং রোগ প্রতিরোধী জাতের ব্যবহার কৃষকের খরচ কমাবে এবং লাভ বাড়াবে।


Discover more from কৃষি প্রতিদিন

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

মতামত দিন