ধানের মৌসুমেও চালের বাজার অস্থির

নওগাঁ ও দিনাজপুরে হঠাৎ বেড়েছে চালের দাম, মিলার ও মজুতদার সিন্ডিকেট দায়ী বলছেন ব্যবসায়ী ও ভুক্তভোগীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক | কৃষি প্রতিদিন

ধান ও চাল উৎপাদনের অন্যতম প্রধান অঞ্চল নওগাঁ ও দিনাজপুরে হঠাৎ করেই চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ধান কাটার মৌসুমে থাকার পরও প্রকারভেদে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ৬ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত, যা নিম্নবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে।

পাইকারি ও খুচরা বাজারে হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি:

দিনাজপুরের বাহাদুরবাজারে মিনিকেট চালের ৫০ কেজির বস্তা এক সপ্তাহে ৩২০০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭০০ টাকায়।
খুচরা বাজারে মিনিকেট এখন বিক্রি হচ্ছে ৯২–৯৫ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৮২–৮৫ টাকা।

অন্যান্য চালের দামও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে:

  • BR-২৯: ৬৩ → ৭৩ টাকা
  • আঠাশ: ৭০ → ৮২ টাকা
  • সুমন স্বর্ণা: ৭০ → ৭৪ টাকা
  • পুরাতন শম্পা কাটারি: ৯৬ টাকা পর্যন্ত

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ:

নিম্ন আয়ের মানুষজন বলছেন, এই দামের ঊর্ধ্বগতি তাদের রুটিরুজিতে বড় প্রভাব ফেলছে। রামনগরের মজিবর রহমান বলেন, “ধান বেচতে গেলে দাম কম, চাল কিনতে গেলে দাম বেশি। কারসাজি চলছে, কেউ দেখছে না।”

চেহেলগাজির বশির উদ্দিন বলেন, “আমি দিনমজুর। চালের দাম এভাবে বাড়লে তো না খেয়ে থাকতে হবে।”

মূল্যবৃদ্ধির কারণ কী?

ব্যবসায়ীদের একাংশ বলছেন, হঠাৎ বোরো ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালকল মালিকরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। অন্যরা বলছেন, সাধারণ ব্যবসায়ী ও মৌসুমি মজুতদাররা ধান মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন।

সুফি রাইসের জাহিদ কামাল বলেন, “মজুতদারদের কারণে ধানের দাম বেড়েছে, মিলাররা পরিস্থিতির শিকার।”

চালের মোকাম ‘আলুপট্টি’র দোকানিরা বলছেন, বাজারে যথেষ্ট ধান থাকা সত্ত্বেও বড় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে দাম বাড়ানো হচ্ছে।

প্রশাসনিক উদ্যোগ

নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফরহাদ খন্দকার জানান, “ওএমএস চালু রাখা হয়েছে। অবৈধ মজুতদারদের ধরতে জেলার বিভিন্ন মিল পরিদর্শন করা হচ্ছে।”

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, “চালের দাম কেন বেড়েছে, তা জানার জন্য তদন্ত চলছে। অপরাধী পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বাংলাদেশ অটো, মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সহসভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন বলেন, “চালকল মালিকদের দোষ না দিয়ে মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে।”


Discover more from কৃষি প্রতিদিন

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

মতামত দিন