শাপলা ফুল চাষের সহজ পদ্ধতি — ধাপে ধাপে গাইড

শাপলা এখন শুধু প্রাকৃতিক ফুল নয়—চাষও করা যায়! জেনে নিন কীভাবে বীজ/মূল সংগ্রহ, জলাধার তৈরি, পরিচর্যা ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে সহজেই শাপলা চাষ করবেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক | কৃষি প্রতিদিন

আমরা শাপলাকে সাধারণত বর্ষাকালের প্রাকৃতিক ফুল হিসেবে জানি—যা নিজের মতো খাল, বিল, কিংবা পুকুরে ফোটে। তবে জেনে রাখুন, শাপলা এখন পরিকল্পিতভাবে চাষও করা সম্ভব! হ্যাঁ, আপনি চাইলে বাড়ির আঙিনায়, ছাদে বা পুকুরে শাপলার চাষ করতে পারেন।

বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৮০ ধরণের শাপলা ফুল দেখা মিলে। তবে,  সাদা শাপলা ফুলের চাষ করা হয় আমাদের দেশে। এছাড়াও আপনি বাড়িতে নীল শাপলা, বেগুনী শাপলা, লাল শাপলা, ইত্যাদি চাষ করতে পারেন।

চলুন জেনে নিই ধাপে ধাপে শাপলা ফুল চাষের পদ্ধতি—

 বীজ বা মূল সংগ্রহ

  • শাপলা চাষ শুরু করতে হলে প্রথমেই দরকার বীজ বা মূল (কন্দ)।
  • স্থানীয় বাজার, নার্সারি কিংবা অনলাইন থেকে বীজ বা কন্দ সংগ্রহ করুন।
  • শাপলার শেকড় ১৫ ফুট পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে, তাই জায়গা নির্বাচনে তা মাথায় রাখুন।

শাপলার কন্দ লাগানোর ক্ষেত্রে আপনাকে শাপলার গোড়ার দিকের শালূক সংগ্রহ করতে হবে। এরপর উক্ত শালূক উপযুক্ত টবের মাটিতে পুতে দিতে হবে এবং পানির পরিমাণ সঠিক মাপে দিতে হবে।

স্থান নির্বাচন

  • শাপলা চাষের জন্য এমন স্থান বেছে নিন, যেখানে প্রচুর সূর্যালোক আসে।
  • জায়গাটি কমপক্ষে ৬-৮ ফুট ব্যাসের হতে হবে এবং পানি সরবরাহ সুবিধা থাকতে হবে।
  • চাইলে ছোট স্কেলে চৌবাচ্চা, ড্রাম, সিমেন্টের ট্যাংক বা বড় টব ব্যবহার করতে পারেন।

জলাধার তৈরি

  • গর্ত করে অথবা পাত্রে ১-২ ফুট গভীর জলাধার তৈরি করুন।
  • নিচে জৈবসার মেশানো মাটি দিন এবং তাতে পানি দিন।
  • জলাধার যেন অতিরিক্ত গরম না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

বীজ বা মূল রোপণ

  • মাটিতে বীজ বা কন্দ বসিয়ে দিন।
  • ২-৩ দিনের মধ্যে পানি স্বাভাবিক হবে এবং চারা গজাতে শুরু করবে।

পরিচর্যা

  • নিয়মিত পানি দিন এবং পানি যেন খুব গরম না হয়, তা নিশ্চিত করুন।
  • গরমের দিনে টবের ওপরে পানার টুকরো ভাসিয়ে দিন, যাতে পানির তাপমাত্রা কমে।
  • আগাছা থাকলে তা পরিষ্কার করুন।

এছাড়া, শাপলার পাতা, কুঁড়ি ও ফুলে ভরে না ওঠা পর্যন্ত টবের পানির উপরে কয়েকটা টোপা পানা ভাসিয়ে দিতে পারেন, যা রোদে বেশি গরম হওয়া থেকে বাঁচাবে।

সার প্রয়োগ

  • প্রয়োজনে সামান্য জৈব সার বা তরল কম্পোস্ট ব্যবহার করুন।
  • গাছের বৃদ্ধি ও পাতার রঙ দেখে বুঝতে পারবেন কখন সার প্রয়োজন।

কোন প্রকার রাসায়নিক সার ব্যবহার করা যাবে না তাতে গাছ মারা যেতে পারে।

ফুল ফোটা ও ফলন

  • সঠিক পরিচর্যায় শাপলা গাছ সাধারণত ৫ বছর পর্যন্ত ফুল দেয়।
  • এই সময়ের মধ্যে কন্দও সংগ্রহ করা যায়।

শাপলা মূলত জলজ উদ্ভিদ। এদেরকে গ্রীষ্মের শুরুতে লাগাতে পারলে মধ্য বর্ষায় ফুল পাবেন।

অতিরিক্ত টিপস:

শাপলার ঔষধি গুনাগুন– শাপলার অনেক ঔষুধি গুণাগুণ রয়েছে। শাপলা রক্ত দোষ ও বহুমূত্র রোগে অনেক উপকারে আসে। এছাড়াও শাপলা প্রসাবের জ্বালা পোড়া, আমাশয় ও পেট ফাঁপায় উপকারী।

শাপলার জলাধারে পোকামাকড় না বাড়ে, সে জন্য মাঝে মাঝে পানির স্তর পরিবর্তন করুন। শাপলা খাওয়ার উপযোগী কিনা তা নিশ্চিত হোন, কারণ সব জাতের শাপলা খাওয়ার উপযুক্ত নয়।


Discover more from কৃষি প্রতিদিন

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

মতামত দিন