ধান চাষে কৃষকের সহায়তায় ব্রি’র ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইন

ধান চাষে সময়োপযোগী তথ্যের অভাবে কৃষককে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। এই প্রেক্ষাপটে ব্রি’র ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইন সেবা কৃষকদের জন্য একটি বড় সহায়ক হবে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই কৃষির পথে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

নিজস্ব প্রতিবেদক | কৃষি প্রতিদিন

ধান চাষে কৃষকদের সময়মতো পরামর্শ দিতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) চালু করেছে ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইন সেবা। এখন দেশের যেকোনো প্রান্তের কৃষকরা ধান উৎপাদনে সারের পরিমাণ, বালাই দমন, সেচ ব্যবস্থাপনা এবং আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য পেতে বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে পারবেন একটি মাত্র নম্বরে ফোন করে।

  • হেল্পলাইন নম্বর: ০৯৬৪৪৩০০৩০০,
  • সেবা সময়: সপ্তাহের ৭ দিন, ২৪ ঘণ্টা,
  • পরামর্শ প্রদানকারী: ব্রি’র এগ্রোমেট ল্যাবের বিজ্ঞানীরা।

আমাদের দেশে বৈরি আবহাওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত কৃষকরা ধান উৎপাদনে ক্ষতির মুখে পড়ছে। তাই,  এ সমস্যা সমাধানে করণীয় সম্পর্কে জানাতে ধানের হেল্পলাইন নামে ২৪ ঘণ্টার কল সেন্টার চালু করা হলো বলে জানান, ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান।

কৃষকের দোরগোড়ায় আধুনিক কৃষি সেবা

২৫ জুন গাজীপুরে ব্রি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত “আবহাওয়ার পূর্বাভাসভিত্তিক কৃষি পরামর্শ প্রচারে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকা” শীর্ষক কর্মশালায় এই সেবার উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন গবেষণা পরিচালক ড. মো. রফিকুল ইসলাম এবং মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রি এগ্রোমেট ল্যাবের সমন্বয়ক ড. এবিএম জাহিদ হোসেন।

“ধান উৎপাদনে বিপ্লব, এবার প্রযুক্তি নির্ভর চাষাবাদে সহায়তা”

অনুষ্ঠানে ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন— “কৃষকের সমস্যা দিনদিন জটিল হচ্ছে—আবহাওয়ার আচরণ পাল্টাচ্ছে, রোগবালাই ও পোকামাকড়ের চাপ বাড়ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য ও প্রযুক্তিগত সহায়তা এখন সময়ের দাবি। এজন্যই আমরা এই ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইন চালু করেছি।”

তিনি আরও জানান—

  • ব্রি এখন পর্যন্ত ১২১টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে, যার মধ্যে ৮টি হাইব্রিড
  • ৩৭টি জাত বৈরি পরিবেশ সহনশীল (লবণাক্ততা, খরা, জলাবদ্ধতা ইত্যাদি)
  • ব্রি উদ্ভাবিত জাত ও প্রযুক্তি মাঠে পৌঁছানোর কারণেই বাংলাদেশ এখন ধান উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়।

আগে একটি জাত উদ্ভাবনে ১৫-২০ বছর সময় লাগতো তবে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সেই সময় কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এটি বর্তমানে ১০ বছরে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বলে জানান, ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান।

কৃষকের জন্য ডিজিটাল যুগের সেবা

এক প্রশ্নের জবাবে ব্রি’র পরিচালক গবেষণা ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বিজ্ঞান ভিত্তিক কৃষি ও প্রযুক্তি নির্ভর চাষাবাদের যুগে প্রবেশ করতে হলে কৃষকদের হাতের নাগালে তথ্য ও সেবা নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে আমাদের এগ্রোমেট ল্যাব অত্যন্ত কার্যকর একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে।

শুধু হেল্পলাইন নয়, আমরা ভবিষ্যতে অ্যাপ ও এসএমএসের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে আবহাওয়া ভিত্তিক চাষাবাদ তথ্য পৌঁছে দিতে চাই, বলে জানান ড. মো. রফিকুল ইসলাম।

হেল্পলাইনের মাধ্যমে যেসব পরামর্শ মিলবে:

  • সারের সঠিক প্রয়োগ
  • আগাছা ও রোগবালাই দমন
  • সেচ ও পানির ব্যবস্থাপনা
  • আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী চাষপদ্ধতি
  • ধানের জাত ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত তথ্য

ড. রফিকুল ইসলাম বলেন— “১৯৭১ সালে যেখানে মাথাপিছু জমি ছিল ২০ শতাংশ, এখন তা নেমেছে ১০ শতাংশে। এই প্রেক্ষাপটে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি গড়ে তোলাই ভবিষ্যতের চাবিকাঠি।”

তিনি জানান, দেশে এখনও ২৫% জমি পতিত পড়ে আছে, যা চাষের আওতায় আনলে খাদ্য উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব।

জলবায়ু পরিবর্তন ও কৃষকের চ্যালেঞ্জ

কর্মশালায় উপস্থাপিত তথ্য মতে—

  • ১৯৯১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত শীতের তীব্রতা কমেছে
  • বর্ষাকাল ১৫ দিন পর্যন্ত পিছিয়ে যাচ্ছে
  • তাপমাত্রা বেড়েছে ১.৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস

৫৪ বছরে কোনো কৃষক তথ্যভাণ্ডার তৈরি হয়নি, যা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে বাধা সৃষ্টি করছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ব্রি জানিয়েছে— শুধু হেল্পলাইন নয়, আমরা ভবিষ্যতে অ্যাপ ও এসএমএসের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে আবহাওয়া ভিত্তিক চাষাবাদ তথ্য পৌঁছে দিতে চাই। এ লক্ষ্যে ব্রি বাংলাদেশ ডেল্টাপ্লান-২১০০ মোতাবেক স্মার্ট এগ্রো-এডভাইজরি ডেসিমিনেশন সিস্টেমের আওতায় ২৯,৩৫৪ জন কৃষক ও সম্প্রসারণ কর্মীর তথ্যভাণ্ডার ইতিমধ্যে তৈরি করেছে।

আমার এটিকে আমরা দেড় লাখে পরিণত করবো যাতে কৃষকদের কাছে সরাসরি তথ্য পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়, এমনটা জানান নিয়াজ মো. ফারহাত রহমাণ।

সবার সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি

ব্রি মহাপরিচালক বলেন— “এই সেবা সফল করতে মিডিয়া, সম্প্রসারণ বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। কৃষকের কাছে তথ্য পৌঁছানোর জন্য গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”


Discover more from কৃষি প্রতিদিন

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

মতামত দিন