শেরপুরের মেঘাদলে কৃষক মিজানুরের বাগানে রাশিয়া–চীনসহ ৮ দেশের আঙুর, দেখতে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত মেঘাদল গ্রামে দেখা মিলছে এক অনন্য দৃশ্যের—থোকায় থোকায় ঝুলছে একেলো, ব্ল্যাক ম্যাজিক, ইসাবেলা, বাইনুকা, পারলেট, আনাব-এ-শাহীসহ ৫০ প্রজাতির রঙিন বিদেশি আঙুর।
এসব আঙুর চাষ করেছেন স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান। তার বাগানে এখন যেন ভিড় লেগেই আছে—দেখতে আসছেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে দূর-দূরান্তের মানুষ।
শখ থেকে শুরু, এখন বাণিজ্যিক পরিকল্পনা
২০২২ সালে মিজানুর রহমানের বাবা আ. জলিল মিয়া ভারতে ঘুরতে গিয়ে শখের বসে আনেন দুটি জাতের ১০টি আঙুরের চারা। সেই চারা নিজের বাড়ির ৩০ শতাংশ জমিতে রোপণ করেন। মাত্র ১০ মাসের মাথায় ফলন দেখে উৎসাহ পান মিজানুর। এরপর তিনি বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করেন আরও ৫০ জাতের আঙুর।
বর্তমানে তার বাগানে রয়েছে ১৫০টি আঙুর গাছ। এর মধ্যে ৫০টি গাছে ভালো ফলন এসেছে। কিছু গাছে ধরেছে প্রতি গাছে ১০-১২ কেজি পর্যন্ত ফল। সম্প্রতি তিনি সবুজ আঙুর স্থানীয় বাজারে ২৫০–৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন।
মিজানুর বলেন, “আমাদের এলাকা পাহাড়ি হওয়ায় শ্রমিক খরচ কম। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। ফলনের পরিমাণ দেখে আমি আশাবাদী।”
তিনি জানান, ভবিষ্যতে দেড় একর জমিতে বাণিজ্যিক আঙুর বাগান করার পরিকল্পনা রয়েছে এবং এর জন্য জমি প্রস্তুত করা হচ্ছে।
রাশিয়া থেকে চীন—৮ দেশের আঙুর এক বাগানে!
আঙুরগুলোর জাত সংগ্রহ করা হয়েছে রাশিয়া, ইউক্রেন, চীন, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ভারতসহ প্রায় ৮টি দেশ থেকে। ফলে একই বাগানে এখন দেখা যাচ্ছে লাল, সবুজ, কালো রঙের বিভিন্ন আঙুরের ঝুলন্ত থোকা—যা এই এলাকায় এক অভিনব চিত্র।
কৃষকদের আগ্রহ, দর্শনার্থীদের প্রশংসা
মিজানুরের সফলতা দেখে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যেও আঙুর চাষে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। প্রতিদিনই কেউ না কেউ পরামর্শ নিতে তার বাগানে আসছেন।
বাবেলাকোনা গ্রামের দালবত মারাক বলেন, “মিজানুর ভাইয়ের বাগানের আঙুর খেয়েছি, খুবই মিষ্টি। বাজারের চেয়ে অনেক ভালো। আমি এখনই দশটি চারা নিতে চাই।”
শেরপুর শহর থেকে আগত মনির হোসেন বলেন, “ফেসবুকে ছবি দেখে এখানে এসেছি। বাজারের আঙুরের চেয়ে এগুলোর মান অনেক ভালো। এক কেজি কিনেছি, সঙ্গে পাঁচটি চারা নেওয়ারও চিন্তা করছি।”
কৃষি বিভাগের সহযোগিতা
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “মিজানুর রহমান পরীক্ষামূলকভাবে আঙুর চাষ করছেন এবং ভালো ফলন পাচ্ছেন। কৃষি বিভাগ থেকে তাকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে তিনি বড় পরিসরে চাষ করতে চাইলে সার্বিক সহায়তা দেওয়া হবে।”
পাহাড়ি অঞ্চলে বাণিজ্যিক আঙুর চাষের নতুন সম্ভাবনা
সাধারণত বাংলাদেশে আঙুর আমদানিনির্ভর একটি ফল হিসেবে পরিচিত। তবে পাহাড়ি মেঘাদলে মিজানুরের এই উদ্যোগ প্রমাণ করেছে, বিদেশি জাতের আঙুরও এ দেশে সফলভাবে চাষ করা সম্ভব। কম খরচ, পাহাড়ি অঞ্চলের অনুকূল পরিবেশ ও স্থানীয়দের আগ্রহের কারণে শেরপুর হতে পারে বাণিজ্যিক আঙুর চাষের নতুন সম্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু।
আরও পড়ুন
Discover more from কৃষি প্রতিদিন
Subscribe to get the latest posts sent to your email.