চরাঞ্চলসহ অনেক জায়গায় বাড়ছে তামাক চাষ। তামাকের রাজত্বে দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে ধানসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ।
গত বছরের তুলনায় এ বছর তামাক পাতার চাষ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এতে কমছে জমির উবর্রতাশক্তি, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
যমুনার চরে এক সময় আবাদ হতো ধানসহ অন্যান্য ফসল। নব্বইয়ের দশকে নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যায় চরের অধিকাংশ ফসলি জমি। তবে, বাঁধ নির্মাণের ফলে যমুনার ভাঙন অনেকটাই কমেছে। দুই বছর আগে আবারও জেগে উঠেছে চর। খবর বাংলাভিশন
এদিকে, আবাদি জমি ফিরে পেলেও ধান চাষে আগ্রহ হারিয়েছেন চরাঞ্চলের কৃষক। বহুজাতিক টোব্যাকো কোম্পানি থেকে সুদমুক্ত ঋণ নিয়ে তামাক আবাদ শুরু করেছেন এক সময়ের ধানচাষীরা।
জানা যায়, বহুজাতিক তামাকজাত কোম্পানির প্রলোভন ও অধিক মুনাফার আশায় তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা।
তামাক উৎপাদনের আগেই কোম্পানিগুলোর বিক্রির নিশ্চয়তা, দর নির্ধারণে চাষিদের অতি লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে তামাক চাষ, আর কাজে আসছে না কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাক প্রক্রিয়াজাত ও ব্যবহারের কারণে মুখে ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়াও, তামাক চাষে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারে নষ্ট হচ্ছে জমির উর্বরতাশক্তি। এটি জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র মতে, জেলার পাঁচটি উপজেলায় এ বছর ২৩৩ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ভূঞাপুরে ১১৫ হেক্টর, কালিহাতীতে ৯০, নাগরপুরে ৭, দেলদুয়ারে ৩ ও সদর উপজেলায় ১৮ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে।
প্রতি বিঘা জমিতে তামাক উৎপাদনে খরচ হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ৪৫-৫০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় কৃষকের লাভ হয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা।
ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী, নলশা, জগৎপুরা, বামনহাটা, চরনিকলা, নিকরাইল, পালিমা, আমুলা; কালিহাতী উপজেলার সল্লা, দেউপুর, চর হামজানী, কদিম হামজানী, পটল, বেরী পটল, জোকারচর, গোহালিয়াবাড়ী, কুর্শাবেনু, সলিল গোবিন্দপুর, আফজালপুর ধলাটেঙ্গর; সদর উপজেলার কাকুয়া, হুগড়া, কাতুলী, মামুদনগর, চরপৌলী; দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি, নাগরপুরের পাকুটিয়া, ভাদ্রা, বেকরা, আটাপাড়া, সলিমাবাদ, ধুবুরিয়া, মোকনা, বনগ্রাম ও শাহজানী গ্রামে তামাক চাষ হচ্ছে। তবে, সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে কালিহাতী ও ভূঞাপুরে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাষ-পূর্ববতী ও পরবর্তী বিশেষ সহায়তা দেয় বহুজাতিক টোব্যাকো কোম্পানিগুলো। তারা তাদের নিজস্ব প্রতিনিধির মাধ্যমে কৃষকদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করে। বীজ ও সার কেনার জন্য নগদ অর্থসহ উপকরণ সরবরাহ ও নিয়মিত তদারকিও করেন কোম্পানির প্রতিনিধিরা।
এসব সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি দাম ভালো পাওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি জেনেও তামাক চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। একই সঙ্গে বিকল্প ফসল উৎপাদনে খরচ বেশি ও ন্যায্যমূল্যের নিশ্চয়তা না থাকায় তামাক চাষে আগ্রহ বাড়ছে তাদের।
এছাড়াও তামাক চাষে দস্তা, ছত্রাকনাশক, ডিএপি, ফসফেট সার দেওয়ার জন্য আলাদা করেও ঋণ দেওয়া হয়। ফলে, এই সকল জমিতে অন্য কোনো ফসল ফলিয়ে এতো টাকা লাভ করা সম্ভব নয় বলে জানান কৃষকরা।
কৃষকরা বলেন, এক সময় ধান চাষ করতাম। কিন্তু, তেমন একটা লাভ হতো না। তাই তামাক চাষ করি। আমাদের দুইটা টাকা যেখান থেকে বেশি আসবে আমরা তো তাই করবো।
জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি (নাটাব) টাঙ্গাইলের সভাপতি এডভোকেট খান মোহাম্মদ খালেদ বলেন, তামাক চাষের কারণে কৃষকদের মাঝেও নানা ধরনের রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।
প্রকৃতির উপর নেমে এসেছে বিরূপ প্রভাব। ফসল ও পরিবেশের ক্ষতি করে তামাক চাষ করা যাবে না। আমরা জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতির পক্ষ থেকে ধূমপান নিরুৎসাহিত করতে কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়াও আইনের যথাযথ প্রয়োগের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আশেক পারভেজ বলেন, অতিরিক্ত লাভের আশায় কৃষক তামাক চাষ করছেন।
জমির উর্বরতাশক্তি নষ্ট ও স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি জানিয়ে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা বিষয়ক সভা ও তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করতে উঠান বৈঠক করা হচ্ছে। কৃষিখাতে যেসব প্রণোদনা রয়েছে, সেগুলো কৃষকদের নিয়মিত দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
Discover more from কৃষি প্রতিদিন
Subscribe to get the latest posts sent to your email.