অষ্টগ্রামের হাওরে নামেনি পানি, বোরো আবাদ অনিশ্চিত

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:

বছরের অর্ধেক সময় পানির নিচে থাকা কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে এখন পুরোদমে কৃষি কাজ চলার কথা। সাধারণত এ সময়ে কৃষকরা বোরো মৌসুমের বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার হাওর থেকে পানি না নামায় বিপাকে পড়েছেন হাজারো কৃষক। জলাবদ্ধতার কারণে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা।

কলমা, আদমপুর ও পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চাষাবাদের জন্য প্রস্তুত হওয়ার বদলে কৃষকরা এখন হতাশায় দিন পার করছেন।

পলি পড়ে বন্ধ পানির গতিপথ

কৃষকরা জানান, বাদাঘাট থেকে প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পলি পড়ে বৈঠাখালী নদীর মুখ ভরাট হয়ে গেছে। ফলে হাওরের পানি নামার স্বাভাবিক পথটি রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এর প্রভাবে কলমা, আদমপুর ও পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের সাতটি মৌজার প্রায় দুই হাজার ৫০০ হেক্টর জমি এখনও জলমগ্ন। যেখানে অন্য বছর এ সময়ে জমি শুকিয়ে যায়, সেখানে এবার হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি জমে আছে।

কৃষকদের আক্ষেপ ও দুশ্চিন্তা

হাওরের একমাত্র ফসল বোরো ধানের ওপরই নির্ভরশীল এ অঞ্চলের অধিকাংশ পরিবার। চাষাবাদ করতে না পারলে সারা বছর কী খেয়ে বাঁচবেন, সেই চিন্তায় দিশেহারা তারা।

কলমা গ্রামের কৃষক রবীন্দ্র দাস বলেন, “নদীটা যদি খনন না করা হয়, তাহলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে। আমরা পুরোপুরি কৃষির ওপর নির্ভরশীল।”

একই এলাকার কৃষক দীপংকর দাস বলেন, “অন্যান্য বছর এই সময়ে জমি শুকনো থাকত। এবার কোথাও হাঁটুসমান, আবার কোথাও কোমরসমান পানি। ঋণের টাকায় জমি বর্গা নিয়েছি, কিন্তু পানি না কমায় কিছুই করতে পারছি না।”

আদমপুরের কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, “পানি না নামলে বীজতলা তৈরি তো দূরের কথা, চাষ করাই সম্ভব নয়। ইকুরদিয়া এলাকায় বৈঠাখালী নদীর মুখ দ্রুত খনন না করলে এই জলাবদ্ধতা কমবে না।”

আলী আক্কাছ নামের আরেক কৃষক জানান, এখনও পাঁচ হাজার একরের বেশি জমি পানিতে ডুবে আছে। উপায় না দেখে অনেকেই এবার চাষাবাদ ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন।

হুমকিতে ৩০-৩৬ হাজার টন ধান উৎপাদন

জলাবদ্ধতার কারণে বড় ধরনের উৎপাদনের ক্ষতির আশঙ্কা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। অষ্টগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অভিজিৎ সরকার জানান, পলি পড়ে বৈঠাখালী নদীর মুখ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নামতে পারছে না। এতে জলাবদ্ধতা দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

তিনি বলেন, “অন্তত আড়াই হাজার হেক্টর জমির বোরো আবাদ এখন হুমকির মুখে। এসব জমি থেকে ৩০ থেকে ৩৬ হাজার টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকে। দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে কৃষকরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়েছি।”


Discover more from কৃষি প্রতিদিন

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

মতামত দিন