নদীতে খাঁচায় মাছ চাষে স্বাবলম্বী ২০ পরিবার, বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি

পাবনার হুরাসাগর নদীতে ভাসমান খাঁচায় তেলাপিয়া চাষ করে বছরে লাখ টাকার আয়, চাষে আগ্রহ বাড়ছে নতুন উদ্যোক্তাদের।

পাবনা প্রতিনিধি 

পাবনার বেড়ার হুরাসাগর নদীতে ভাসমান খাঁচায় তেলাপিয়া মাছ চাষ করে দারুণ সফলতা পেয়েছেন স্থানীয় ২০টি পরিবার। প্রাকৃতিক পরিবেশে সুস্বাদু মাছ উৎপাদনের পাশাপাশি এ চাষ পদ্ধতি তাদের এনেছে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা। দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি বদলে দিচ্ছে গ্রামীণ জীবনের চিত্র।

পিপিডির সহযোগিতায় যাত্রা, এখন ১০০ খাঁচায় মাছ চাষ

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সহায়তায় প্রোগ্রামস ফর পিপলস ডেভেলপমেন্ট (পিপিডি) ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাবনার বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখা গ্রামে হতদরিদ্র ২০ জনকে নিয়ে গঠন করে একটি মৎস্য সমবায় সমিতি।

সমবায়ের প্রধান উদ্যোক্তা আব্দুল মুন্নাফ মোল্লা হুরাসাগর নদীতে প্রথমে ২০টি ভাসমান খাঁচায় মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষ শুরু করেন।

ছয় মাসের মধ্যেই সাফল্য আসে। মাত্র দুই বছরে খাঁচার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০টিতে। এছাড়া এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে স্থানীয় উদ্যোক্তা আমির আলীসহ আরও কয়েকজন নতুন করে ৪০টি খাঁচায় চাষ শুরু করেছেন।

এক খাঁচা থেকে বছরে আয় এক লাখের বেশি

পিপিডি সূত্রে জানা গেছে, এক খাঁচায় বছরে পাঁচবার মাছ চাষ করা হয়।

  • খরচ: প্রতি খাঁচায় বছরে ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।
  • বিক্রি: বছরে আয় ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
  • নিট লাভ: ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা।

একজন উদ্যোক্তা যদি বছরে চারটি খাঁচায় মাছ চাষ করেন, তবে তাঁর লাভ দাঁড়ায় প্রায় ৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।

খাঁচার কাঠামো ও মাছের বৃদ্ধি

প্রতিটি খাঁচার জন্য তিন স্তরের জাল ব্যবহার করা হয়।

দৈর্ঘ্য: ২০ ফুট, প্রস্থ: ১০ ফুট এবং  উচ্চতা: ৬ ফুট।

জালগুলোতে শুরুতে ১৫–২০ দিন পোনা রাখা হয়, পরে বড় নকনেজ জালে স্থানান্তর করা হয়। নিচের স্তরে পলিথিন জাল দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, প্রতিটি খাঁচায় ৪,০০০–৬,০০০ পোনা ছাড়া হয়। দুই মাসের মধ্যেই মাছের ওজন প্রায় এক কেজি পর্যন্ত হয়।

প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা: জীবন বদলে যাওয়া গল্প

প্রধান উদ্যোক্তা আব্দুল মুন্নাফ মোল্লা বলেন, “শুরুতে এত লাভ হবে ভাবিনি। প্রশিক্ষণ আর পিপিডির সহায়তায় দ্রুত সফলতা পেয়েছি। এখন আমার চারটি খাঁচায় ২৪ হাজার পোনা রয়েছে। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে চাষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।”

সুজানগরের আমির আলী বলেন, “লুঙ্গি-গামছার ব্যবসায় লোকসানে পড়ে খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করি। এখন ৬০টি খাঁচা রয়েছে। মাছ দ্রুত বড় হয়, চাহিদাও অনেক।”

রফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রাকৃতিকভাবে মাছ বড় হওয়ায় এর রং-স্বাদ-চাহিদা সবই বেশি। পোনাও এখন নিজেরাই উৎপাদন করছি, ফলে খরচও কমে গেছে।”

পিপিডি বেড়া শাখার মৎস্য কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী বলেন, “খাঁচায় মাছ চাষে শুধু ব্যক্তি নয়, নদীর সঠিক ব্যবহারে অবদান রাখছে। সরকারের সহযোগিতা পেলে এ প্রযুক্তির বিস্তার ঘটিয়ে আরও কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব।”


Discover more from কৃষি প্রতিদিন

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

মতামত দিন