উঠতে শুরু করেছে নতুন আলু, কেজি ৪০ টাকা

নীলফামারী প্রতিনিধি:

উত্তরের জেলা নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় উঠতে শুরু করেছে শীতের আগাম জাতের নতুন আলু। মৌসুমের শুরুতেই ক্ষেত থেকে এই আলু ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত মৌসুমে বড় অংকের লোকসান গুনলেও এবার নতুন আলুর ফলন ও ভালো দাম পেয়ে সেই ক্ষতি পুষিয়ে লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এই অঞ্চলে পুরোদমে নতুন আলু বাজারে উঠবে।

মাঠের চিত্র ও প্রথম উত্তোলন

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কেশবা গ্রামের কৃষক সোরহাব হোসেন সোমবার (১৮ নভেম্বর) সেভেন জাতের আগাম আলু উত্তোলন করেছেন। মাত্র ৫৫ দিনে ৫৯ শতক জমি থেকে তিনি ৩৫০ কেজি আলু পেয়েছেন। মৌসুমের একেবারে শুরুর দিকে হওয়ায় আকার কিছুটা ছোট হলেও ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পেরেছেন তিনি।

কৃষক সোরহাব হোসেন বলেন, “দেশের মধ্যে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় সবার আগে আলু তোলা হয়। আমিই প্রথম তুললাম। আগামী এক সপ্তাহ পরেই এই এলাকায় পুরোদমে আলু তোলা শুরু হবে।”

সরেজমিনে দেখা গেছে, কিশোরগঞ্জের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সবুজের সমারোহ। দুর্গাপূজার আগে বৃষ্টিতে আলু ক্ষেত কিছুটা কর্দমাক্ত হলেও তেমন মড়ক ধরেনি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা। অনেক কৃষক আমন ধান কাটার পরপরই ওই জমিতে বীজ আলু রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

লোকসান ভুলে নতুন স্বপ্ন

গত মৌসুমে হিমাগারে রাখা আলুতে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয়েছে অনেক কৃষককে। তবুও থেমে নেই তারা। নতুন উদ্যমে আবারও আগাম ও মাঝারি পর্যায়ের আলু চাষে নেমেছেন।

উপজেলার যদুমনি এলাকার আলু চাষি লুৎফর রহমান লুতু মিয়া বলেন, “হিমাগারে প্রায় ছয় হাজার বস্তা আলু রেখেছিলাম। এতে প্রায় ৪০ লাখ টাকা লোকসান গুনেছি। তবুও লাভের আশায় এ বছর ১৩ বিঘা উঁচু জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণ করেছি। এবারও ৩০ বিঘা জমিতে বীজ আলু চাষ করব। আশা করছি, ফলন ও দাম ভালো পেলে আগের লোকসান পুষিয়ে নিতে পারব।”

নিতাই মুশরুত পানিয়ালপুকুর এলাকার আরেক কৃষক আল-আমিন জানান, তিনি ৭০ বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণ করেছেন। বর্তমানে তার আলুর বয়স ৩৫ থেকে ৫০ দিন। বাজার দর নিয়ে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও লাভের আশায় বুক বেঁধেছেন তিনি।

কৃষি বিভাগের ভাষ্য

কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার লোকমান আলম জানান, এ বছর উপজেলায় ৬ হাজার ৬শ’ ৬০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে আগাম জাতের আলুই ৩ হাজার ৪৩০ হেক্টর।

তিনি বলেন, “মৌসুমের শুরুতে বাজারে নতুন আলুর ব্যাপক চাহিদা থাকে। এখানকার কৃষকরা স্থানীয় ‘সেভেন’ জাতের আগাম আলু ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মাথায় উত্তোলন শুরু করেন। অল্প সময়ে এ ফসলে কৃষকরা যে লাভ করেন, অন্য কোনো ফসলে তা সচরাচর আসে না। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা আসা শুরু করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদনের আশা করছি আমরা।”


Discover more from কৃষি প্রতিদিন

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

মতামত দিন