আধুনিক কৃষিযন্ত্রের উচ্চমূল্যের বিপরীতে ঈশ্বরগঞ্জে গড়ে উঠেছে ব্যতিক্রমী যন্ত্রের বাজার।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বর্তমানে একটি নতুন পাওয়ার টিলার কিনতে যেখানে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়, সেখানে দেশের প্রান্তিক কৃষকদের পক্ষে এই খরচ বহন করা প্রায় অসম্ভব। ফলে বাধ্য হয়েই তারা ঝুঁকছেন পুরোনো কৃষিযন্ত্রের দিকে।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে গড়ে উঠেছে এমন একটি অপ্রচলিত ও কার্যকর কৃষিযন্ত্রের হাট, যা এখন হয়ে উঠেছে কৃষকের টিকে থাকার অন্যতম হাতিয়ার।
বাস্তব অভিজ্ঞতা: পুরোনো টিলারে লাভের মুখ দেখছেন কৃষক আবুল বাশার
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের কৃষক মো. আবুল বাশার গত বোরো মৌসুমে ৭০ হাজার টাকায় একটি পুরোনো টিলার কিনে চাষাবাদ করেন।
নিজের জমির পাশাপাশি আশপাশের কৃষকদের জমিও চাষ করেন তিনি। মৌসুম শেষে আয় হয় প্রায় ২৫ হাজার টাকা, এবং ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে তিনি লাভ করেন প্রায় ১০ হাজার টাকা।
এবারও তিনি এসেছেন পুরোনো টিলার কিনতে। তাঁর কথায়,“নতুন টিলার কেনা আমাদের সাধ্যের বাইরে। পুরোনো যন্ত্রই এখন আমাদের ভরসা।”
সেখানে আবুল বাশার বলেন, ‘নতুন পাওয়ার টিলার কিনতে গেলে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা লাগে। আমাদের মতো ছোট কৃষকের পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়। সে কারণে এ বছরও এসেছি সাধ্যের মধ্যে পুরোনো টিলার কিনতে। আশা করছি, এবারও সাশ্রয় হবে।’
কেমন এই পুরোনো কৃষিযন্ত্রের হাট?
ঈশ্বরগঞ্জের মধুপুর বাজারের পাশে একটি খোলা জায়গায় গড়ে উঠেছে এই অবিকল্প কৃষিযন্ত্র বাজার। এখানে পাওয়া যায়—
- পাওয়ার টিলার।
- ট্রাক্টর।
- থ্রেসার মেশিন।
- অন্যান্য কৃষিযন্ত্র।
দাম শুরু মাত্র ৪০ হাজার টাকা থেকে এবং প্রয়োজন অনুসারে দরদাম করে কৃষকরা সহজেই যন্ত্র কিনে নিতে পারেন। এটি কোনো নির্দিষ্ট দিনের হাট নয়। জমি প্রস্তুতি বা ফসল কাটা-পোড়ানোর মৌসুমে এটি হয়ে ওঠে ব্যস্ততম কেনাবেচার জায়গা।
হাটসংশ্লিষ্টরা জানান, কেউ বিক্রির জন্য কৃষিযন্ত্র নিয়ে আসেন, কেউ কম দামে কিনতে আসেন। ঈশ্বরগঞ্জ ছাড়াও নান্দাইল, ত্রিশাল, গৌরীপুরসহ আশপাশের উপজেলার কৃষকরা এ হাট থেকে যন্ত্রপাতি কিনে নিয়ে যান।
কেন এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই হাট?
- নতুন যন্ত্রের উচ্চমূল্য: ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার কিনতে লাগে প্রায় ২ লাখ টাকা।
- কম খরচে কাজের সুবিধা: পুরোনো যন্ত্রেও ঠিকভাবে ব্যবহার করলে ভালো ফল মেলে।
- নগদ না থাকলেও কেনা সম্ভব: ঋণ বা সঞ্চয়ে পুরোনো যন্ত্র কেনা সহজ।
- পুনরায় বিক্রির সুবিধা: মৌসুম শেষে একই হাটেই যন্ত্র বিক্রি করে ফেরত পাওয়া যায় খরচের বড় অংশ।
কৃষকের কণ্ঠে আশা
নান্দাইলের কৃষক সবু মিয়া বলেন, “নতুন মেশিন কেনার সামর্থ্য নেই। এই পুরোনো মেশিন দিয়েই চাষ করি, পরে বিক্রি করে দিই। আমাদের মতো গরিব কৃষকের জন্য এটাই সবচেয়ে সাশ্রয়ী উপায়।”
পুরোনো যন্ত্র বিক্রেতা মো. হারুন মিয়া বলেন, “পুরোনো যন্ত্র ঠিকঠাক মেরামত করে কৃষকদের দেই। কৃষকরাও খুশি, আমরাও কিছুটা লাভ করি।”
কৃষি বিভাগের দৃষ্টিতে বিষয়টি
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রিপা রানী চৌহান বলেন, “আমি পুরোনো কৃষিযন্ত্র কেনাবেচার বিষয়টি অবগত নই, তবে এটি কৃষকদের জন্য সহায়ক হতে পারে। সঠিক ব্যবহার ও সচেতনতা থাকলে কৃষকের লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে।”
ঋণ, আয়ের অনিশ্চয়তা ও যন্ত্রের উচ্চমূল্যের চাপে যখন দেশের অনেক প্রান্তিক কৃষক দিশেহারা, তখন ঈশ্বরগঞ্জের এই পুরোনো কৃষিযন্ত্রের হাট হয়ে উঠেছে তাদের আশার আলো। এটা শুধু একটি হাট নয়, বরং কৃষকের ঘুরে দাঁড়ানোর কৌশল, টিকে থাকার লড়াইয়ে বড় সহায়।
Discover more from কৃষি প্রতিদিন
Subscribe to get the latest posts sent to your email.