রাজশাহীতে আমের দাম কম, বাজারে ক্রেতা নেই

গোপালভোগ, হিমসাগরসহ বিভিন্ন জাতের আমের দাম গত বছরের তুলনায় মণপ্রতি কমেছে ৭০০–১০০০ টাকা। চাষি ও ব্যবসায়ীরা লোকসানের আশঙ্কায়।

রাজশাহী প্রতিনিধি:

প্রচুর উৎপাদনের মুখে রাজশাহীর আম বাজারে এবার মূল্য হ্রাস পেয়েছে। গত বছরের তুলনায় মণপ্রতি দাম কমেছে ৭০০ থেকে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত। কোরবানির ঈদ সামনে থাকায় ক্রেতার সংখ্যাও কম, ফলে আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন।

চলতি বছর রাজশাহীতে ১৯,৬০৩ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এবারের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার ৬ মেট্রিক টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাছে প্রচুর মুকুল এসেছে এবং ফলনও হয়েছে ভালো। বাজারে গোপালভোগ, হিমসাগর, লক্ষণভোগ, ল্যাংড়া, রাণীপ্রসাদসহ একাধিক জাতের আম একসঙ্গে উঠেছে।

বাজারের বর্তমান চিত্র:

রাজশাহীর বৃহত্তম আমবাজার বানেশ্বর হাট ঘুরে দেখা গেছে, গোপালভোগ আম বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ১,৮০০–২,০০০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ২,৮০০–৩,২০০ টাকা। হিমসাগরের দাম শুরু হয়েছে ১,৬০০ টাকা থেকে, যেখানে গত বছর তা ছিল ২,৬০০ টাকা। গুটি আম ৮০০–১,০০০ টাকা, লক্ষণভোগ ৮০০–৯০০ টাকা এবং রাণীপ্রসাদ ১,০০০–১,২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া নির্ধারিত সময়ের আগেই বাজারে চলে এসেছে ল্যাংড়া আম। প্রশাসনের নির্ধারিত সময় ছিল ১০ জুন, কিন্তু এর আগেই বিক্রি শুরু হয়েছে ১,৪০০–১,৬০০ টাকা মণে। ফজলি ও আম্রপালি বাজারে আসবে ১৫ জুন থেকে।

চাষি ও ব্যবসায়ীদের হতাশা:

বাঘা উপজেলা থেকে আসা চাষি আলাউদ্দিন বলেন, “টানা বৃষ্টিতে আমের রঙ ও আকার সুন্দর হলেও এবার দাম নেই বললেই চলে। গত বছর গোপালভোগ তিন হাজারে বিক্রি করেছি, এবার তা দুই হাজারে ছাড়তে হয়েছে।”

বানেশ্বর হাটের আড়তদার আসাদুল্লাহ জানান, “গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার দাম সবচেয়ে কম। কোরবানির ঈদ সামনে থাকায় ঢাকার পাইকাররা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।”

কারণ কী বলছে প্রশাসন:

রাজশাহী অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক সাবিনা বেগম জানান, “এবার ৯৮ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছিল এবং আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। তবে সরবরাহ বেশি হওয়ায় দাম কিছুটা কমেছে।”

ভবিষ্যতের প্রত্যাশা:

চাষিরা আশা করছেন, কোরবানির ঈদের পর শহরের পাইকাররা আবার সক্রিয় হবেন এবং তখন দাম কিছুটা বাড়তে পারে। তবে বর্তমানে বাজার পরিস্থিতি আমচাষিদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।