ডিজিটাল বন্যা পূর্বাভাস প্রান্তিক কৃষকের কতটা কাজে আসে?

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামে আগাম বন্যার সুনির্দিষ্ট পূর্বাভাসের অভাবে ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ব্যাপক কৃষি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ফসল ঘরে তোলার আগেই প্রায় ৩০০ হেক্টর জমির বোরো ধান, তিল, ভুট্টা, বাদাম এবং বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষকেরা বলছেন, সময়মতো পূর্বাভাস পেলে লোকসানের পরিমাণ অনেক কম হতো।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় ১৯ মে থেকে বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমে বন্যার সম্ভাবনার বিষয়ে প্রচারণা চালালেও তা অনেক কৃষকের কাছে পৌঁছায়নি। এর অন্যতম কারণ হিসেবে ইন্টারনেট সংযোগ, প্রযুক্তি ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা এবং সচেতনতাভাবকে দায়ী করা হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর রাজারহাট উপজেলায় ১৭৫ হেক্টর ও উলিপুরে ২৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩০০ হেক্টর ফসলি জমি। এখনো ৬৪ হেক্টর চিনাবাদাম ও ১ হেক্টর তিল পানিতে নিমজ্জিত।

রাজারহাট, কুড়িগ্রাম সদর এবং উলিপুর উপজেলার কৃষকেরা জানান, বন্যার পূর্বাভাস সম্পর্কে তাঁদের কেউ কোনো তথ্য জানাননি। অনেকেই জানেন না বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য কোনো অনুদান বা সহায়তা আছে কি না। আধুনিক প্রযুক্তির যুগেও প্রান্তিক কৃষকদের এখনো প্রকৃতির ওপর ভরসা করেই চাষাবাদ করতে হয়, বিশেষ করে চরাঞ্চলে কৃষি কর্মকর্তাদের উপস্থিতি সীমিত হওয়ায়।

উলিপুরের সাহেবের আলগা ইউনিয়নের কৃষক আবদুল মমিন বলেন, “উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ায় আমার চিনাবাদাম, তিল সব ডুবে গেছে। আগেই জানলে আধাপাকা ফসল তুলে নিতাম। সব শেষ হয়ে গেছে। আমরা কৃষক মানুষ, টাচ ফোন চালাতে পারি না। সরকার কোথায় বন্যার খবর দেয় তা তো আমরা জানি না। যদি নদীপাড়ে মাইকিং করে ঘোষণা দিত, উপকার হতো।”

রাজারহাটের চর গতিয়াশাম গ্রামের কৃষক রুহুল আমীন জানান, তিস্তা নদীর চরে ৫০ শতক জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। বৃষ্টি শুরু হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন প্রকৌশলী নদী পরিদর্শনে এসে বন্যার আশঙ্কার কথা জানান। তিনি বলেন, “৩০ শতক বাদাম তুলেছি, বাকিগুলো ডুবে গেছে। যদি ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিটাল বোর্ড বা বাজারে মাইকিং হতো, ক্ষতি কম হতো।”

রিভারাইন পিপলের পরিচালক অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন,”তিস্তার উজানে সিকিমে বৃষ্টিপাত হলে সেই ঢল বাংলাদেশে আসতে কয়েক দিন লাগে। আগাম তিন দিন আগে যদি কৃষকদের সতর্ক করা যেত, তাহলে বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো যেত। আমাদের পূর্বাভাস ব্যবস্থা প্রান্তিক কৃষকদের উপযোগী করে ঢেলে সাজানো দরকার।”

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবদুল মতিন জানান,”প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ডিজিটাল কিয়োক্স ড্যাশবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে প্রতিদিনের আবহাওয়ার তথ্য, বৃষ্টিপাত এবং বন্যা সম্পর্কে সতর্কতা দেওয়া হয়। কৃষকেরা এগুলো দেখে ব্যবস্থা নিলে ক্ষতি কমানো সম্ভব।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (শস্য) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় কমিটি রয়েছে। তারা পূর্বাভাস পাওয়ার পর কৃষকদের জানিয়ে দেয়। পাশাপাশি ওয়েবসাইটে প্রচারও চালানো হয়।”

মতামত দিন