কুমিল্লায় ধসে পড়ছে বাণিজ্যিক পান চাষ: ক্ষতির মুখে কৃষক

শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা, কমছে আবাদি জমির পরিমাণ।

মূল সমস্যা সংক্ষেপে:

  • পোকা ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ।
  • কৃষি অফিসের পরামর্শের অভাব।
  • চাষে উচ্চ খরচ, কম আয়।
  • নেই প্রণোদনা বা সহায়তা।

কুমিল্লা প্রতিনিধি

কুমিল্লায় ক্রমেই কমছে সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল পান এর বাণিজ্যিক চাষ। একসময় যে চাষ ছিল আয়-রোজগারের নির্ভরযোগ্য উৎস, এখন তা কৃষকের জন্য লোকসানের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের কারণে একের পর এক বরজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অথচ কৃষকদের পাশে নেই কৃষি বিভাগ, নেই কোনো সরকারি প্রণোদনা বা উপযুক্ত পরামর্শ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কুমিল্লার চান্দিনা, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, বুড়িচং ও বরুড়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় আগে প্রায় ১১৬ হেক্টর জমিতে পান চাষ হতো। বর্তমানে তা নেমে এসেছে মাত্র ৮০ হেক্টরে।

কৃষকদের অভিমত: পরিশ্রম বাড়ছে, লাভ কমছে

দেবিদ্বারের গুনাইঘর এলাকার পান চাষি অনিল চন্দ্র দত্ত বলেন, “অনেক গাছ ও পাতা পচে যাচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে কোনো সঠিক পরামর্শ পাই না। চাষাবাদে খরচ অনেক, লাভ নেই বললেই চলে। যদি প্রণোদনা ও কারিগরি সহায়তা পেতাম, হয়তো টিকে থাকতে পারতাম।”

চাহিদা যা উঠে এসেছে:

  • পান চাষিদের জন্য সরকারি প্রণোদনা।
  • কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সক্রিয় তদারকি।
  • রোগবালাই দমন ও চাষ পদ্ধতি নিয়ে প্রশিক্ষণ।

আরেক চাষি, নেপাল বলেন, “৪০ বছর ধরে চাষ করি। আগে আয় ভালো হতো, এখন তা দিন দিন কমছে। খরচ বেড়েছে, আয় হয়নি। অনেকেই তাই এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।”

পান চাষি নিখিল চন্দ্রও জানান, “আমরা অন্যান্য কৃষিপণ্যের মতো সহযোগিতা পাই না। আমাদের দাবি, পান চাষিদের জন্যও যেন সহায়তা ও পরামর্শ নিশ্চিত করা হয়।”

কৃষি বিভাগের অবস্থান

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইয়ুব মাহমুদ জানান, “বর্তমানে ৮০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করি চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে। তবে সত্যি কথা, পান চাষিদের জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ বা প্রণোদনা নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।”

অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন চন্দ্র মজুমদার মনে করেন,  “পান চাষ একটি উৎপাদনশীল খাত। এখান থেকে চাষিরা মুখ ফিরিয়ে নিলে কর্মসংস্থান কমবে, বেকারত্ব বাড়বে। অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এখনই পান চাষিদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি।”

আরও পড়ুন… 


Discover more from কৃষি প্রতিদিন

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

মতামত দিন