রঙিন মাছ চাষে জীবন রাঙাচ্ছেন সাগর হোসেন!

গাইবান্ধার তরুণ উদ্যোক্তার সফলতায় অনুপ্রাণিত হচ্ছেন অন্যরাও।

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গোল্ড ফিশ, কমেট, কই কার্ভ, ওরেন্টা গোল্ড, সিল্কি কই, মলি, গাপটি, অ্যাঞ্জেল প্রভৃতি বর্ণিল মাছ দেখলে চোখ জুড়ায়, মন ভরে যায়। এমন রঙিন মাছ চাষ করে মাসে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় করছেন রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা জেলার তরুণ সাগর হোসেন।

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগে পড়াশোনা শেষ করা এই তরুণ  অ্যাকুরিয়ামের জন্য উপযোগী গোল্ড ফিশ, কমেট, কই কার্প, গাপটি, অ্যাঞ্জেলসহ ২০-২৫ প্রজাতির রঙিন মাছ চাষ করছেন নিজের গ্রামের বাড়িতেই।

সাগর হোসেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের সরকারটারী গ্রামের বাসিন্দা। ২০১৯ সালে করোনা মহামারির সময় ইউটিউবে রঙিন মাছ চাষের ভিডিও দেখে শুরু হয় তার যাত্রা।

মাত্র ৩ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করে বর্তমানে দেড় লাখ রঙিন মাছ উৎপাদন করছেন। বর্তমানে গাইবান্ধা ছাড়াও তার মাছ যাচ্ছে রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া, এমনকি ঢাকা পর্যন্ত।

শুরুতে কৌতুক, এখন স্বীকৃতি

সাগর হোসেন জানান, ২০১৯ সালে করোনায় হঠাৎ ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেলে বাড়িতে বসে অলস সময় কাটছিল। হঠাৎ ইউটিউবে চোখে পড়ে রঙিন মাছ চাষের ভিডিও। এ মাছের চাষ বাড়িতেও করা যায় কি না ভাবতে শুরু করেন

প্রথমদিকে পরিবার ও স্থানীয়দের কাছ থেকে সমর্থন না পেলেও আজ তার সাফল্যে সবাই গর্বিত।

তিনি ইউটিউব দেখে রেণু উৎপাদন করেছেন, ব্যবসা বাড়াতে ধার নিয়েছেন ২০ হাজার টাকা, এবং এখন ৩টি পুকুর ও ১৮টি হাউজ নিয়ে পরিচালনা করছেন নিজের ‘সাগর এগ্রো ফার্ম’।

ব্যবসা শুরুর পরই দেখা দেয় বড় সংকট। মাছগুলো কোথায় বিক্রি করবেন? স্থানীয় বাজারে এসব মাছ মানুষ কিনবে কি না? পরিচিত একজন সব শুনে মাছ কিনতে আগ্রহ দেখান।

বাড়ছে চাহিদা, বাড়ছে বাজার

সাগরের মতে, ‘অ্যাকুরিয়াম এখন শুধু বাসাবাড়িতে নয়, শপিংমল, হোটেল, অফিস, দোকানেও ব্যবহার হচ্ছে। ফলে রঙিন মাছের বাজারও প্রসারিত হচ্ছে।’

এ বিষয়ে গাইবান্ধার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুর রাশেদ বলেন, ‘সাগর হোসেনের উদ্যোগে আমরা নিয়মিত নজর রাখছি এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তার সফলতা দেখে অনেকেই এখন রঙিন মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।’

সাগর হোসেন গনমাধ্যমকে বলেন, ‘বর্তমানে ২০-২৫ প্রজাতির রঙিন মাছ চাষ করছি। এতে ৪০-৫০ হাজার টাকা মাসে আয় করছি। আমাদের দেশে অ্যাকুরিয়ামে রঙিন মাছ ব্যাপক জনপ্রিয়। দিন যত যাচ্ছে ব্যবহারও তত বাড়ছে। ফলে দেশের টাকা দেশেই থাকছে। রঙিন মাছ চাষে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করতে চাই।

উদ্ভাবন ও স্বাবলম্বিতার গল্প

প্রথমদিকে সাগর হোসেনের রঙিন মাছ চাষ দেখে পরিবার ও স্থানীয়রা হাসি-ঠাট্টা করলেও বর্তমানে সফলতা দেখে খুশি অনেকেই।

সাগরের বন্ধু ওবাদুর রহমান বলেন, “রঙিন মাছ চাষে বন্ধুর জীবন যেমন বদলেছে, তেমনি আমিও উৎসাহিত হয়েছি। চাকরির পেছনে না ছুটে আমি এখন উদ্যোক্তা হতে চাই।”


Discover more from কৃষি প্রতিদিন

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

মতামত দিন