বাংলাদেশসহ বিশ্বে রেকর্ড খাদ্যশস্য উৎপাদনের সুখবর দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)।
গম, ভুট্টা ও চাল—সবগুলোতেই প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা, খাদ্য নিরাপত্তায় আশার আলো
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) জানিয়েছে, চলতি বছর বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্য উৎপাদনে রেকর্ড তৈরি হতে পারে। FAO-র সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক খাদ্যশস্য উৎপাদন ২,৯২৫ মিলিয়ন টন ছাড়াতে পারে, যা আগের বছরের তুলনায় ০.৫% বা প্রায় ১৪ মিলিয়ন টন বেশি।
বিশ্বের শীর্ষ শস্য উৎপাদক দেশগুলোর মধ্যে এবার বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ব্রাজিল ও ভিয়েতনাম উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে। এর ফলে FAO তাদের আগের পূর্বাভাস সংশোধন করেছে।
কোন ফসল কতটা বাড়ছে?
গম:
- নতুন পূর্বাভাস: ৮০৫.৩ মিলিয়ন টন।
- বৃদ্ধি: ০.৯% (২০২৪ সালের তুলনায়)।
- মূল কারণ: ভারত ও পাকিস্তানে রেকর্ড ফলনের সম্ভাবনা।
ভুট্টা (মোটা শস্য):
- নতুন পূর্বাভাস: ১,২৬২ মিলিয়ন টন।
- বৃদ্ধি: ৩.৫%।
- মূল অবদানকারী: ব্রাজিল ও ভারতের উৎপাদন বৃদ্ধি।
চাল:
- নতুন পূর্বাভাস: ৫৫৫.৬ মিলিয়ন টন।
- বৃদ্ধি: ১%।
- মূল দেশ: ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম।
বাংলাদেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনের অগ্রগতি
FAO-র তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০২৪-২৫ মৌসুমে চাল ও অন্যান্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন আগের চেয়ে বেশি হতে পারে। জমির পরিমাণ, জলবায়ুর অনুকূলতা এবং চাষে সরকারি সহায়তা বৃদ্ধির ফলে এ অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।
বিশেষ করে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের ব্যবহার ও মজুত কী বলছে?
ব্যবহার:
- মোট ব্যবহার: ২,৯০০ মিলিয়ন টন (০.৮% বেশি)।
- মোটা শস্য: ১,৫৪৮ মিলিয়ন টন (+৪.৭ মিলিয়ন টন)।
- চাল: ৫৫০.৪ মিলিয়ন টন (+১.৮%)।
- গম: পূর্বাভাস কমানো হয়েছে (চীন, মরক্কো ও যুক্তরাষ্ট্রে কম ব্যবহার)।
মজুত:
- মোট মজুত: ৮৮৯.১ মিলিয়ন টন।
- বৃদ্ধি: ১৫.৫ মিলিয়ন টন (২.২%)।
- মজুত-ব্যবহার অনুপাত: ৩০.৩% (পূর্বে ছিল ২৯.৮%)।
→ যা ইঙ্গিত দেয় পর্যাপ্ত সরবরাহ ও খাদ্য নিরাপত্তা বজায় থাকবে।
কোথায় উৎপাদন কমছে?
- ইরাক ও যুক্তরাষ্ট্রে চাল উৎপাদনের পূর্বাভাস কিছুটা কমেছে।
- ইউক্রেনে যুদ্ধ ও খরার প্রভাব পড়েছে কৃষি খাতে।
- তবে উগান্ডা ও অন্যান্য অঞ্চলের উৎপাদন এই ঘাটতি পূরণে সাহায্য করবে।
FAO-র সাম্প্রতিক পূর্বাভাস বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে একটি ইতিবাচক বার্তা দেয়। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অব্যাহত অগ্রগতি, প্রযুক্তি ব্যবহারে উন্নয়ন, এবং চাষাবাদে নীতিগত সহায়তা রেকর্ড উৎপাদনের পথে এগিয়ে নিচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের মজুত, ব্যবহার ও উৎপাদন সবগুলো ক্ষেত্রেই সতর্ক কিন্তু আশাব্যঞ্জক চিত্র উঠে এসেছে, যা বৈশ্বিক খাদ্য বাজারে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
Discover more from কৃষি প্রতিদিন
Subscribe to get the latest posts sent to your email.