বর্ষার দিনে চা-বাগানে ফুটেছে কমলা কসমস, প্রজাপতিরা মেতে উঠেছে মধু আহরণে।
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি
প্রকৃতির যেখানে প্রাণ, সেখানেই সৌন্দর্য। বর্ষার দিনে শ্রীমঙ্গলের এক চা-বাগান বাঙলোর আঙিনায় দেখা গেল এমনই প্রাণবন্ত এক দৃশ্য— কমলা কসমস ফুলে বসে বসে মধু পান করছে এক ঝাঁক প্রজাপতি। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ল এক মনোমুগ্ধকর প্রজাতি— ‘ডোরাকাটা অ্যালবাট্রস’ (Striped Albatross)।
এই প্রজাপতির পুরুষটির ডানা সাদা, যার কিনারা ঘিরে থাকে কালো রেখায়। স্ত্রী প্রজাতির ডানায় গাঢ় ছোপের সঙ্গে হলুদাভ ছাপ থাকে, যা তাদের সহজেই আলাদা করে চিনতে সাহায্য করে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে প্রাকৃতিক পরিবেশে এদের দেখা মেলে।
প্রজাপতি-ফুলের চিরন্তন বন্ধুত্ব
ফুল ও প্রজাপতির সম্পর্ক নিঃসন্দেহে প্রকৃতির এক অনবদ্য রসায়ন। সূর্যোদয়ের আলোয় যখন ফুল প্রস্ফুটিত হয়, তখন রেণুর গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে ছুটে আসে নানা প্রজাতির প্রজাপতি। এই সৌন্দর্য যেমন চোখ জুড়িয়ে দেয়, তেমনি প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ— পরাগায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই পতঙ্গেরা।
কসমস ফুলে প্রজাপতির খেলা
জানা গেছে, কসমস ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Garden Cosmos বা Mexican Aster। যদিও এটি মেক্সিকো থেকে এসেছে, বাংলাদেশের শীতকালীন বাগানে এটি বেশ পরিচিত ও জনপ্রিয় ফুল। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের চা-বাগান বাঙলোর আঙিনায় এর গোলাপী, বেগুনি, সাদা ও কমলা রঙ প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তোলে।
শ্রীমঙ্গলের চা-বাগান আঙিনায় ফুটে থাকা কমলা কসমস ফুলে ৫–৩০ সেকেন্ডের জন্য বসে থাকে ‘ডোরাকাটা অ্যালবাট্রস’, ফুলের রস সংগ্রহ করে সূক্ষ্ম লম্বা নলের মতো একটি অঙ্গের মাধ্যমে। একসময় দেখা গেল—একটি প্রজাপতি মধু আহরণ করছে, হঠাৎ আরেকটি এসে তাকে গুঁতো দিয়ে তাড়িয়ে দিল! খুনসুটি আর সৌন্দর্যের এমন মুহূর্ত প্রকৃতির অপূর্ব ছন্দকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।
জীববৈচিত্র্যের বার্তা দেয় প্রজাপতির উপস্থিতি
এই প্রজাপতির উপস্থিতি কেবল দৃশ্যমান সৌন্দর্যের বার্তাই বহন করে না, বরং একটি সজীব ও সুস্থ পরিবেশের প্রতীকও বটে। প্রকৃতির ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে প্রজাপতিরা ভূমিকা রেখে চলেছে নীরবে।
Discover more from কৃষি প্রতিদিন
Subscribe to get the latest posts sent to your email.