অপবিত্র পানি বা মাটিতে জন্মানো শাক-সবজি হালাল কি না? কোরআন-হাদিসের আলোকে জানুন এর ইসলামী ব্যাখ্যা ও শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি।
হালাল থাকা সবজির প্রকৃতি নাপাক জায়গায় জন্মালেও বদলায় না
ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে, শাক-সবজি ও ফসল তাদের জন্মস্থানের কারণে নিজে নিজে হারাম হয়ে যায় না। অর্থাৎ কোনো সবজি যদি এমন মাটি বা পানিতে জন্মায় যেখানে ময়লা, আবর্জনা, কিংবা নাপাক বস্তু রয়েছে, তবুও সেই শাকসবজি হালাল ও খাওয়া জায়েজ থাকবে—যতক্ষণ না তা নিজে কোনো হারাম উপাদান ধারণ করে ফেলে।
একইভাবে কোনো ফসলের ক্ষেতে যদি অপবিত্র পানির মাধ্যমে সেচ দেওয়া হয় বা অপবিত্র কিছু সার হিসেবে দেওয়া হয়, তাহলে ওই ক্ষেতে উৎপন্ন শাক-সবজি খাওয়াও জায়েজ হবে।
উদ্ভিদের খাদ্য গ্রহণের প্রক্রিয়া শরিয়তের মানদণ্ডে বিশ্লেষণ
গাছপালা তাদের পুষ্টি গ্রহণ করে রাসায়নিক রূপান্তরের মাধ্যমে। তাই গাছ যদি দূষিত পানি বা মাটির মাধ্যমে খাদ্য গ্রহণও করে, তার ভেতরের গঠন ও রসায়নে নাপাকি রূপান্তরিত হয় না। গাছের ভেতরের অংশ, ফল বা সবজি—সবই তার স্বাভাবিক গঠনে রূপান্তরিত হয়ে পবিত্র থাকে।
তবে যদি বৈজ্ঞানিকভাবে কোনো ফল বা সবজিতে প্রমাণিতভাবে এমন মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান থেকে যায়, তখন সেটি খাওয়া হারাম হবে। কিন্তু শুধুমাত্র মলমূত্র বা নাপাক পানি-মাটিতে জন্মানোর কারণে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হারাম হয়ে যায় না।
খাওয়ার আগে পরিষ্কার করাই জরুরি
যেহেতু বাইরে নাপাকি লেগে থাকতে পারে, তাই অপবিত্র জায়গায় উৎপন্ন সবজি বা ফল ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে খাওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। এতে বাহ্যিক নাপাকি দূর হয়ে যায় এবং শরিয়তের দৃষ্টিতে সেটি সম্পূর্ণ হালাল ও ভক্ষণযোগ্য থাকে।
কোরআনের আলোকে হালাল খাদ্যের নির্দেশনা
আল্লাহ তাআলা কোরআনে পবিত্র ও হালাল খাদ্য গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন: “হে মানুষ, পৃথিবীতে যা কিছু আছে, তার হালাল ও পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” — (সুরা বাকারা: ১৬৮)
এছাড়াও রাসুল (সা.) সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি তাঁর অনুসারীদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল করেন এবং অপবিত্র ও ক্ষতিকর বস্তুসমূহ হারাম ঘোষণা করেন। কোরআন বলে: “তিনি তাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল করেন এবং অপবিত্র বস্তুসমূহ হারাম করেন।” — (সুরা আরাফ: ১৫৭)
উপসংহার
অপবিত্র জায়গায় জন্মানো সবজি বা ফল নিজে থেকে নাপাক হয় না। শরিয়তের দৃষ্টিতে তা হালাল, যদি না তা সরাসরি হারাম বস্তু ধারণ করে অথবা ক্ষতিকর পদার্থ বহন করে। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে খাওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। ইসলামে পবিত্রতা ও নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ—উভয়কেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
Discover more from কৃষি প্রতিদিন
Subscribe to get the latest posts sent to your email.