পরিবেশ রক্ষায় দেশজ প্রজাতির গাছ রোপণের উদ্যোগ, বিতরণ হচ্ছে ৩৩ লাখ চারা
নিজস্ব প্রতিবেদক:
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জেলায় আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের চারা ধ্বংসে অভিযান চালাচ্ছে কৃষি বিভাগ।
এই দুই আগ্রাসী প্রজাতির গাছ অতিরিক্ত পানি শোষণ, মাটির গুণাগুণ নষ্ট ও আশপাশের গাছের বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে বলে চিহ্নিত হয়েছে। তাই এসব গাছের উৎপাদন, রোপণ ও বিপণন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কৃষকের জন্য প্রণোদনা ও বিকল্প চারা বিতরণ
নার্সারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে থাকা এসব চারা ধ্বংসে মাঠপর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা অভিযানে নেমেছেন। ধ্বংস করা প্রতিটি চারার বিপরীতে কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে ৪ টাকা করে প্রণোদনা। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া বিকল্প হিসেবে দেশের ৪৯টি জেলার ৪৩০টি উপজেলায় ৩৩ লাখ দেশজ ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা বিনামূল্যে বিতরণ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
পাশাপাশি নার্সারি মালিকরা আর এই চারা উৎপাদন করবেন না এমন অঙ্গীকারও করছেন।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইং জানায়, সারাদেশে ২ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার ৭৭টি আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস চারা শনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে:
- আকাশমণি: ৭৯ লাখ ৪৪ হাজার ৪৮৪টি
- ইউক্যালিপটাস: ১ কোটি ৪১ লাখ ১৬ হাজার ৫৯৩টি
এর মধ্যে ১৬১টি উপজেলায় ইতোমধ্যে ৬৯ লাখ ৪৫ হাজার ৫২০টি চারা ধ্বংস করা হয়েছে। ৪২টি উপজেলায় আংশিক ধ্বংস এবং ২২৭টি উপজেলায় ধ্বংস কার্যক্রম চলছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের বক্তব্য
সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, “আমরা মাঠপর্যায়ে চারা চিহ্নিত করে ধ্বংস করছি। একইসঙ্গে পরিবেশ উপযোগী দেশজ গাছের চারা বিতরণ করা হচ্ছে। কেউ যাতে ভবিষ্যতে এসব গাছ উৎপাদন না করেন, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।”
আরও পড়ুন
কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান জানান, “পরিবেশবান্ধব গাছের তালিকা করে আমরা নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করছি। এই কার্যক্রম চলবে প্রণোদনার আওতায়। ভবিষ্যতে এমন গাছ যাতে রোপণ না হয়, সে জন্য প্রকল্প নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।”
বিশেষজ্ঞ মতামত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম মাহফুজুর রহমান বলেন, “আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস চারা ধ্বংস অভিযান পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই গাছ মাটির আর্দ্রতা শুষে নেয়, আন্ডারগ্রোথ ধ্বংস করে ও রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরিত করে মাটিকে বিষাক্ত করে তোলে।”
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৫ মে সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ের ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছের চারা তৈরি ও রোপণ এবং বিক্রয় নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন দেয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়, অতিরিক্ত পানি শোষণ, মাটি অনুর্বর করা, আশপাশের গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়া, পাখির অনুপযোগী পরিবেশ তৈরি করে এসব গাছ।
তাই দেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আগ্রাসী প্রজাতির গাছের চারা রোপণের পরিবর্তে দেশি প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করে বনায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এই প্রজ্ঞাপনের পর কৃষি মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ের সব উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের এসব গাছের চারা শনাক্ত করে ধ্বংসের নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে স্থানীয় পরিবেশের উপযোগী গাছের চারা সরবরাহ এবং কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ারও নির্দেশনা দেওয়া হয়।
Discover more from কৃষি প্রতিদিন
Subscribe to get the latest posts sent to your email.