লবণাক্ত মাটিতেও চাষযোগ্য গমের নতুন জাত

লবণাক্ত মাটিতেও চাষযোগ্য ‘জিএইউ গম ১’: উচ্চ ফলনশীল ও প্রোটিন সমৃদ্ধ গমের নতুন জাত। গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগান্তকারী উদ্ভাবন, দক্ষিণাঞ্চলের জন্য আশার আলো।

নিজস্ব প্রতিবেদক | কৃষি প্রতিদিন

বাংলাদেশের কৃষিতে যুক্ত হলো নতুন এক সম্ভাবনার নাম—‘জিএইউ গম ১’। গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গাকৃবি) কৃষি বিজ্ঞানীদের দীর্ঘ গবেষণায় উদ্ভাবিত এই নতুন জাতের গম দেশের উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলে অধিক ফলন এবং উচ্চ প্রোটিন সরবরাহে সক্ষম।

এটি শুধু জলবায়ু সহনশীলই নয়, বরং মানবদেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও গবাদি পশুর খাদ্য সরবরাহেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

কী আছে ‘জিএইউ গম ১’–এ?

বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ব বিভাগের দুজন কৃষি বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এম. ময়নুল হক এবং প্রফেসর ড. মো. মসিউল ইসলামের নেতৃত্বে গমের এ জাত উদ্ভাবন করা হয়। এ জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে গাকৃবির মোট উদ্ভাবিত জাতের সংখ্যা ৯১টি পৌঁছালো

 বৈশিষ্ট্য:

  • লবণ সহনশীল।
  • উচ্চ ফলনশীল (লবণাক্ত মাটিতে ৩.৭৫ টন/হেক্টর, স্বাভাবিক মাটিতে ৪.৫ টন)।
  • প্রোটিন সমৃদ্ধ ও গ্লুটেনিনযুক্ত।
  • ৯৫-১০০ দিনে পরিপক্ব।
  • অধিক খড় উৎপাদনক্ষম।
  • ব্লাস্ট, রস্টসহ রোগ প্রতিরোধী।
  • তামাটে, চকচকে দানা।
  • আমন মৌসুমের পর বপন উপযোগী।

ল্যাব পরীক্ষায় প্রমাণিত: সহজপাচ্য, শরীরে দ্রুত শোষিত হয় এবং ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে।

গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন জানান, দীর্ঘদিন গবেষণা ও ফলন পরীক্ষার পর ২০২১ থেকে ২০২৩ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কৃষকের মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে লবণাক্ততা সহিষ্ণু ও উচ্চ ফলনশীল হিসেবে প্রমাণিত হয়।

পরবর্তীতে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির তত্ত্বাবধানে দেশের ৬টি স্থানে মাঠ মূল্যায়নে প্রস্তাবিত ফলন পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফলাফলের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় বীজ বোর্ড ১৭ জুন এ গমের ছাড়পত্র দেয়।

উপকূলের জন্য আশার আলো

দক্ষিণাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকার লবণাক্ত জমিতে ফসল উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা। উদ্ভাবক ড. মো. মসিউল ইসলাম বলেন, “জিএইউ গম ১ শুধুমাত্র গবেষণার ফল নয়, এটি কৃষকের জন্য দায়বদ্ধতার বাস্তব প্রতিফলন। লবণাক্ত অঞ্চলে এটি কৃষিকে নতুন মাত্রা দেবে।”

আরও পড়ুন 

গাকৃবি উপাচার্য ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এ জাতের উদ্ভাবন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় অর্জন। উপকূলের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।”

গবাদি পশুর খাদ্যেও ভূমিকা

গাছের আকার বড় ও কাণ্ড মোটা হওয়ায় এ জাত থেকে বেশি পরিমাণ খড় পাওয়া যায়, যা গরু-ছাগলের খাদ্য সংকট মোকাবিলায় কার্যকর। কৃষকেরা একই জমিতে ধান ও গম দুটোই চাষ করতে পারবেন, ফলে আয়ের দ্বিগুণ সম্ভাবনা।

গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন জানান, এ গমের গাছের আকার বড়, কাণ্ড মোটা ও গুটির সংখ্যা বেশি হওয়ায় এটি থেকে অধিক পরিমাণ খড় পাওয়া যায়। ফলে গবাদি পশুর খাদ্য চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

উৎকৃষ্টমানের এ জাতের ফলন হেক্টর প্রতি স্বাভাবিক মাটিতে ৪.৫ টন এবং লবণাক্ত মাটিতে ৩.৭৫ টন ফলন পাওয়া সম্ভব, যা একে অন্যান্য জাতের গম থেকে বিশেষ স্থানে নিয়ে গিয়েছে।


Discover more from কৃষি প্রতিদিন

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

মতামত দিন