আলুর দাম বাড়ছে, কিছুটা স্বস্তিতে কৃষকরা

লোকসান কমলেও এখনো মুনাফার অপেক্ষায় অনেক চাষি।

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের বাজারে আলুর দাম বাড়ছে। এতে একদিকে যেমন সাধারণ ভোক্তাদের ওপর চাপ বাড়ছে, অন্যদিকে কিছুটা স্বস্তি ফিরছে লোকসানে থাকা কৃষকদের মাঝে।

চলতি মৌসুমে উৎপাদনের পর থেকে দাম না পাওয়ায় হতাশ ছিলেন কৃষকেরা। এখন দাম কিছুটা বাড়ায় লোকসান কমলেও এখনো অনেকে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণে হিমাগারে আলু জমিয়ে রেখেছেন।

এক সপ্তাহেই ৩.৭৭% দাম বৃদ্ধি

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।

  • জুলাইয়ের শুরুতে গড় দাম ছিল ২২.৫ টাকা।
  • জুলাইয়ের মাঝামাঝি এসে দাম হয়েছে ২৭.৫ টাকা।
  • ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫–৩০ টাকায়।

পাইকারি আর খুচরা দামের ফারাক

আলু উৎপাদনের বড় এলাকা মুন্সিগঞ্জের কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের মতে, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু ১৪–১৫ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরা পর্যায়ে তা বিক্রি হচ্ছে প্রায় ২৫ টাকায়।

বিষয় তথ্য
খুচরা দাম ২৫–৩০ টাকা/কেজি
হিমাগার দাম ১৪–১৫ টাকা/কেজি
কৃষকের উৎপাদন খরচ ১৪–২০ টাকা/কেজি
সরকার হস্তক্ষেপ করবে ৩৫ টাকা/কেজির বেশি হলে

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন: “আমাদের থেকে যে দামে আলু ছাড়ছি, খুচরা বাজারে তার চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এটা অবাক করার মতো।”

কৃষকের চাহিদা: ন্যায্য দাম ও মুনাফার নিশ্চয়তা

গাইবান্ধার কৃষক সাকিউল ইসলাম জানান,”জুনের শুরুতে আলু বিক্রি করেছি ৯ টাকা কেজিতে। মাস শেষে তা বেড়ে হয়েছে ১৩ টাকা। এখনো লাভের মুখ দেখিনি। দাম আরও না বাড়লে বছরের শেষে বড় ধরনের লোকসান হবে।”

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী—

  • চলতি মৌসুমে আলুর গড় উৎপাদন খরচ: ১৪ টাকা/কেজি।
  • উত্তরাঞ্চলে কিছু জায়গায়: ২০ টাকা/কেজি পর্যন্ত।
বন্যা ও সরবরাহ সংকটও প্রভাব ফেলছে

কৃষি সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়া বলেন, “সাম্প্রতিক বন্যায় অনেক এলাকায় সবজির খেত নষ্ট হয়েছে। ফলে আলুর ওপর চাহিদা বেড়েছে, যা দামের ঊর্ধ্বগতির একটি কারণ।”

কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, “বর্ষায় সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় এবং মৌসুম শেষ হওয়ায় বাজারে চাপ বেড়েছে। ফলে আলুসহ সবজির দাম বাড়ছে। তবে কৃষকের উৎপাদন খরচ বিবেচনায় এ দাম যৌক্তিক।”

হিমাগারে আলু ধরে রেখেছেন অনেকেই

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের বাবু বলেন, “যারা এখনও ন্যায্য দাম পাননি, তারা হিমাগার থেকে আলু ছাড়ছেন না। দাম আরও বাড়বে—এই আশায় অনেক কৃষক অপেক্ষা করছেন।”

 সরকার এখনই বাজারে হস্তক্ষেপ করছে না জানিয়ে কৃষি সচিব বলেন, “যতক্ষণ না আলুর দাম কেজিতে ৩৫ টাকা ছাড়ায়, ততক্ষণ সরকার বাজারে হস্তক্ষেপ করবে না। কারণ, কৃষকদের ন্যূনতম মুনাফা নিশ্চিত করাও জরুরি।”


Discover more from কৃষি প্রতিদিন

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

মতামত দিন